গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আল জাজিরার ৫ সাংবাদিক নিহত
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৮:১০ এম, ১১ আগস্ট ২০২৫

ইসরায়েলের বিমান হামলায় গাজা উপত্যকার আল-শিফা হাসপাতালের কাছে প্রাণ হারিয়েছেন কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার পাঁচ সাংবাদিক। সোমবার (১১ আগস্ট) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
আল জাজিরার তথ্য অনুযায়ী, নিহতরা হলেন—প্রতিবেদক আনাস আল-শরীফ ও মোহাম্মদ কুরাইকেহ এবং ক্যামেরাপার্সন ইব্রাহিম জাহের, মোহাম্মদ নুফাল ও মোয়ামেন আলিওয়া। তারা হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে সাংবাদিকদের জন্য স্থাপিত একটি তাঁবুতে অবস্থান করছিলেন। ওই তাঁবুতেই ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালায়।
ঘটনার পর এক বিবৃতিতে আল জাজিরা একে “সাংবাদিকতার স্বাধীনতার ওপর পরিকল্পিত ও প্রকাশ্য হামলা” এবং “টার্গেটেড অ্যাসাসিনেশন” হিসেবে উল্লেখ করে।
হামলার কিছু পরেই ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) টেলিগ্রামে জানায়, তারা আনাস আল-শরীফকে লক্ষ্য করে অভিযান চালিয়েছে। আইডিএফের দাবি, তিনি হামাসের একটি সশস্ত্র সেলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। তবে নিহত বাকি চার সাংবাদিকের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি তারা। আল জাজিরার হিসাবে, এই হামলায় মোট সাতজন নিহত হয়েছেন। প্রথমে চার সাংবাদিকের মৃত্যু নিশ্চিত করা হলেও পরে তা সংশোধন করে পাঁচজন বলা হয়।
আল জাজিরার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মোহাম্মদ মোয়াওয়াদ বিবিসিকে জানান, আল-শরীফ ছিলেন অনুমোদিত সাংবাদিক এবং গাজার চলমান পরিস্থিতি তুলে ধরার অন্যতম কণ্ঠ। তার ভাষায়, “তারা ফ্রন্টলাইনে ছিলেন না, সাংবাদিকদের তাঁবুতেই ছিলেন। ইসরায়েলি সরকার গাজার ভেতরের সংবাদ কাভারেজ বন্ধ করতে চায়—এটি তারই প্রমাণ।”
২৮ বছর বয়সী আল-শরীফ মৃত্যুর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ গাজা সিটিতে তীব্র গোলাবর্ষণের খবর পোস্ট করছিলেন। মৃত্যুর পর তার এক বন্ধু পূর্বলিখিত একটি পোস্ট প্রকাশ করেন।
বিবিসি যাচাই করা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, নিহতদের মরদেহ বহন করছেন কয়েকজন ব্যক্তি। কেউ কেউ কুরাইকেহর নাম ধরে ডাকছেন, আর একজন মিডিয়া ভেস্ট পরা ব্যক্তি জানাচ্ছেন, মৃতদের একজন আল-শরীফ।
আইডিএফের অভিযোগ, আল-শরীফ সাংবাদিক সেজে ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিক ও সেনাদের ওপর রকেট হামলায় যুক্ত ছিলেন। তারা দাবি করে, এ বিষয়ে আগেই গোয়েন্দা তথ্য প্রকাশ করা হয়েছিল, যাতে ‘সন্ত্রাসী প্রশিক্ষণ কোর্সের তালিকাও’ ছিল। সেনাবাহিনী আরও জানায়, বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য নির্ভুল অস্ত্র, আকাশ নজরদারি ও অতিরিক্ত গোয়েন্দা তথ্য ব্যবহার করা হয়।
গত মাসে আল জাজিরা, জাতিসংঘ এবং কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) আলাদা বিবৃতিতে আল-শরীফের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছিল। আল জাজিরার অভিযোগ, গাজায় তাদের সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে আইডিএফ ধারাবাহিকভাবে ‘উসকানিমূলক প্রচারণা’ চালিয়ে আসছে, যা সরাসরি টার্গেট করার অজুহাত তৈরির চেষ্টা।
সিপিজের হিসাবে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত ১৮৬ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।