যুদ্ধবিরতির মধ্যেই গাজায় ইসরায়েলের হামলা, নিহত ৬২


যুদ্ধবিরতির মধ্যেই গাজায় ইসরায়েলের হামলা, নিহত ৬২

বিশেষ যুদ্ধবিরতির আওতায় ত্রাণ সরবরাহ চালু থাকলেও, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজায় ফের ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এই আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৬২ জন, যাদের মধ্যে ৩৪ জন ত্রাণ সংগ্রহের সময় নিহত হন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার রোববারের (২৭ জুলাই) প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

এর আগে, মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে গাজার নির্দিষ্ট তিনটি এলাকায় প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়সীমায় সামরিক অভিযান সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এই যুদ্ধবিরতি প্রতিদিন কার্যকর থাকবে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত।

রয়টার্স জানায়, আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ইসরায়েল প্রথমবারের মতো সাময়িক বিরতির ঘোষণা দেয়। পাশাপাশি তারা নতুন ত্রাণ করিডোর চালুর কথাও জানায়, যাতে করে বেসামরিক মানুষের সহায়তা কার্যক্রম সহজ হয়।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী রোববার জানায়, গাজার আল-মাওয়াসি, দেইর আল-বালাহ এবং গাজা সিটি এলাকায় প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সামরিক অভিযান বন্ধ রাখা হবে। উল্লেখ্য, মার্চ মাসের পর থেকে এসব এলাকায় নতুন করে স্থল অভিযানের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

তাদের আরও বক্তব্য, সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খাবার ও ওষুধবাহী গাড়িবহরের চলাচলের জন্য একটি নিরাপদ রুটও চালু থাকবে।

এদিকে মিসরের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আল-কাহেরা নিউজ টিভির বরাতে জানা গেছে, রবিবার থেকেই মিসর সীমান্ত দিয়ে গাজায় ত্রাণ পৌঁছানো শুরু হয়েছে। এর পাশাপাশি, আকাশপথে ইসরায়েলও কিছু ত্রাণ ফেলে দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে, যা তারা ‘মানবিক পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার উদ্যোগ’ হিসেবে বর্ণনা করছে।

জাতিসংঘের মতে, এই মানবিক বিরতি ত্রাণ সরবরাহ বাড়াতে সহায়ক হবে। তবে তাদের অভিযোগ, ইসরায়েল এখনো পর্যাপ্ত বিকল্প রুট বরাদ্দ করছে না, যা ত্রাণ বিতরণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রয়টার্স আরও জানায়, গাজার ভয়াবহ মানবিক সংকট নিয়ে বৈশ্বিক উদ্বেগ বাড়ছে। এর মধ্যেই গত শুক্রবার ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দেয়, তারা হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির আলোচনায় আর অংশ নিচ্ছে না। তাদের দাবি, “হামাস কোনও সমঝোতায় আগ্রহী নয়।”

গত মার্চে ইসরায়েল সম্পূর্ণভাবে ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ করে দিলে গাজার ২২ লাখ মানুষের জন্য তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দেয়। মে মাসে সীমিতভাবে ত্রাণ সরবরাহের অনুমতি মিললেও তা ছিল কঠোর শর্তসাপেক্ষ।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত কয়েক সপ্তাহে অপুষ্টিজনিত কারণে প্রাণ হারিয়েছে বহু মানুষ। চলমান সংঘাতে এখন পর্যন্ত অপুষ্টিতে ১২৭ জন মারা গেছেন, যাদের মধ্যে ৮৫ জন শিশু।

ইসরায়েল অবশ্য দাবি করছে, গাজায় দুর্ভিক্ষ নেই এবং তারা হামাসের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে সাময়িকভাবে ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ রেখেছিল, যাতে করে বন্দিদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয় হামাস।

তাদের ভাষ্য, এখন পর্যাপ্ত ত্রাণ দেওয়া হয়েছে, বরং জাতিসংঘ সঠিকভাবে তা বিতরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। তবে জাতিসংঘ বলছে, কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলের সামরিক অভিযান গাজায় ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে নিহত হয়েছেন প্রায় ৬০ হাজার মানুষ, যাদের অধিকাংশই সাধারণ নাগরিক। অব্যাহত বিমান ও স্থল হামলায় অঞ্চলটি প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, এবং অধিকাংশ বাসিন্দাই গৃহহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×