যুদ্ধবিরতির আহ্বান উপেক্ষা করে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সংঘাতে বাড়ছে প্রাণহানি


যুদ্ধবিরতির আহ্বান উপেক্ষা করে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সংঘাতে বাড়ছে প্রাণহানি

দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে চলমান সংঘাত থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, বরং বাড়ছে প্রাণহানি ও আহতের সংখ্যা। কম্বোডিয়ার যুদ্ধবিরতির আহ্বান সত্ত্বেও এ পরিস্থিতি অবনতি ঘটছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।

বার্তা সংস্থা এএফপির তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় ভোরে সংঘর্ষ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত উভয় দেশে ৩৩ জন নিহত এবং ১৩০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। হতাহতদের মধ্যে রয়েছেন সাধারণ নাগরিক ও সেনাবাহিনীর সদস্য উভয়ই।

কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ১৩ জন তাদের দেশের নাগরিক। এদের মধ্যে ৮ জন বেসামরিক এবং ৫ জন সেনা সদস্য। এ ছাড়া থাই সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণ ও গোলার আঘাতে কমপক্ষে ৭১ জন কম্বোডীয় আহত হয়েছেন।

অন্যদিকে, থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের দেশে প্রাণ হারিয়েছেন ২০ জন, যাদের মধ্যে ১৪ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ৬ জন সেনাসদস্য।

দুই দেশের দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধই এ সংঘাতের মূল কারণ। প্রায় ১১৮ বছর ধরে 'পান্না ত্রিভুজ' নামের একটি সীমান্ত অঞ্চল নিয়ে চলছে বিরোধ। থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও লাওসের সীমান্তসংলগ্ন এই ভূখণ্ডে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থাপনা, যা উভয় দেশই নিজেদের বলে দাবি করে আসছে।

এই বিরোধের শিকড় ১৯০৭ সালের ফরাসি উপনিবেশিক শাসনামলে। সে সময় ফ্রান্স একটি মানচিত্র প্রকাশ করে, যেখানে পান্না ত্রিভুজ অঞ্চলকে কম্বোডিয়ার অংশ হিসেবে দেখানো হয়। এই মানচিত্রের বিরোধিতা করে থাইল্যান্ড। পরে, ১৯৫৩ সালের ৯ নভেম্বর ফ্রান্সের শাসন থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পরও কম্বোডিয়ার মানচিত্রে পরিবর্তন না আসায়, দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা থেকেই যায়।

দীর্ঘ সময় ধরে চলা এই সীমান্ত উত্তেজনার মধ্যে প্রায় ১৫ বছর আগে দু’দেশ একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছায়। তবে চলতি বছরের মে মাসে থাই সীমান্তের কাছে এক কম্বোডীয় সেনা নিহত হওয়ার পর পরিস্থিতি ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

এর ধারাবাহিকতায়, গত সপ্তাহে বুধবার সীমান্তে ল্যান্ড মাইন বিস্ফোরণে এক থাই সেনা গুরুতর আহত হন। পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে কম্বোডিয়ার দুটি সামরিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায় থাইল্যান্ড। এর পাল্টা জবাবে কম্বোডীয় বাহিনী থাইল্যান্ডের বান নাম ইয়েন প্রদেশে রকেট নিক্ষেপ করে। এরপর থেকে শুরু হয় পাল্টাপাল্টি হামলা।

কম্বোডিয়া ইতিমধ্যেই সংঘাত থামাতে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। যদিও থাইল্যান্ড সরাসরি কোনো আহ্বান জানায়নি, দেশটির কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন—দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় রাষ্ট্রগুলোর জোট আসিয়ান (ASEAN)-এর মধ্যস্থতা গ্রহণ করতে তারা প্রস্তুত।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ও আসিয়ানের বর্তমান চেয়ারপারসন আনোয়ার ইব্রাহিম দুই দেশকে কূটনৈতিক উপায়ে সমঝোতায় পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, “সংঘাত এড়িয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজতে হবে।” তাঁর এই আহ্বানের প্রতি ইতিবাচক সাড়া দিলেও, বাস্তব পরিস্থিতিতে সংঘাত বন্ধ হওয়ার কোনো ইঙ্গিত এখনও পাওয়া যায়নি।

সূত্র: এএফপি

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×