ইউক্রেন সরকারে বড় পরিবর্তন: সিভিরিদেঙ্কোকে প্রধানমন্ত্রী করলেন জেলেনস্কি
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৯:২৯ পিএম, ১৯ জুলাই ২০২৫

তিন বছরের যুদ্ধে বিপর্যস্ত ইউক্রেন সরকারে বড় ধরনের রদবদল এনেছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, যার অংশ হিসেবে দেশটি পেয়েছে নতুন প্রধানমন্ত্রী। বিশ্লেষকরা এই পরিবর্তনকে যুদ্ধকালীন প্রশাসনের জন্য কৌশলগত মোড় বলেই দেখছেন।
৩৯ বছর বয়সী ইউলিয়া সিভিরিদেঙ্কো ইউক্রেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তিনি ডেনিস শ্যামিহালের স্থলাভিষিক্ত হলেন, যিনি ২০২০ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) পার্লামেন্টের অনুমোদনের পর সিভিরিদেঙ্কো আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেন।
এর আগে সিভিরিদেঙ্কো ইউক্রেনের উপপ্রধানমন্ত্রী ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। সে সময়েই যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে ওঠে। চলতি বছরে ইউক্রেন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ চুক্তির পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেন তিনিই। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তিই ট্রাম্প এবং জেলেনস্কির মধ্যে পূর্বের উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ককে অনেকটা স্বাভাবিক করতে সাহায্য করেছে।
নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে সিভিরিদেঙ্কো জানান, তাঁর মূল লক্ষ্য হবে দেশীয় অস্ত্র উৎপাদন বাড়ানো, সেনাবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করা এবং যুদ্ধ-পীড়িত অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখা।
তিনি বলেন, “আমরা এমন একটি ইউক্রেন গড়তে চাই, যা স্বনির্ভর সামরিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে থাকবে। সময় কম, কাজ করতে হবে দ্রুত ও ফলপ্রসূভাবে।”
প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে যাওয়ার পর ডেনিস শ্যামিহালকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ সামনে আসায় এই পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্রনীতিতে বড় কোনো পরিবর্তন আসছে না—আন্দ্রিয়ি সিবিহা আগের মতোই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকছেন। তবে বিচারমন্ত্রী ওলহা স্তেফানিশিনাকে ওয়াশিংটনে ইউক্রেনের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, যার জন্য এখন শুধু যুক্তরাষ্ট্রের চূড়ান্ত সম্মতির অপেক্ষা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর সঙ্গে দীর্ঘদিনের কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে স্তেফানিশিনার, এবং তিনি খনিজ সম্পদ চুক্তিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্বে থাকা ওক্সানা মার্কারোভা পদত্যাগ করছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল ঠান্ডা, কারণ তিনি মূলত বাইডেন প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভকেও যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রদূত হিসেবে পাঠানোর সম্ভাবনার কথা শোনা গেলেও, বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য ইয়ারোস্লাভ ঝেলেজনিয়াক দাবি করেছেন—ওয়াশিংটন তাঁর মনোনয়ন প্রত্যাখ্যান করেছে।
এছাড়া মন্ত্রিসভায় অর্থনীতি, কৃষি, পরিবেশ এবং ইউরোপীয় সংযুক্তিকরণ সংক্রান্ত দায়িত্ব পেয়েছেন ওলেক্সি সোবোলেভ ও তারাস কাচকা।
তবে এই রদবদল ঘিরে সমালোচনাও কম হচ্ছে না। বিরোধী দল এবং বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, যদিও কিছু নতুন মুখ এসেছে, অধিকাংশ মন্ত্রী আগের প্রশাসনেরই অংশ ছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি মূলত তাঁর ঘনিষ্ঠদের দিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করে নিজের রাজনৈতিক প্রভাব আরও পাকাপোক্ত করছেন।