চালের দাম লাফিয়ে বাড়ায় তীব্র চাপে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইশিবা


চালের দাম লাফিয়ে বাড়ায় তীব্র চাপে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইশিবা

জাপানে চালের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি দেশটির রাজনীতিতে বড় চাপ তৈরি করেছে। এক বছরের ব্যবধানে চালের দাম প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় আসন্ন নির্বাচনের আগে কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা।

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন মাসে চালের দাম বেড়েছে ৯৯.২ শতাংশ, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। এর আগেও দাম বাড়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে—মে মাসে বাড়ে ১০১ শতাংশ, এপ্রিলে ৯৮.৪ শতাংশ এবং মার্চে ৯২.৫ শতাংশ।

টোকিও থেকে এএফপির খবরে বলা হয়, খাদ্যপণ্যের এই দামের উল্লম্ফন ইশিবার নেতৃত্বকে বড় রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে, বিশেষ করে যখন রোববার অনুষ্ঠিতব্য উচ্চকক্ষের নির্বাচন সামনে।

অন্যদিকে, জাপানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি জুন মাসে কমে দাঁড়িয়েছে ৩.৩ শতাংশে, যেখানে মে মাসে এটি ছিল ৩.৭ শতাংশ। যদিও এটি বাজার বিশ্লেষকদের প্রত্যাশিত ৩.৪ শতাংশের চেয়ে সামান্য কম। তবে জ্বালানি ও পচনশীল খাদ্য বাদ দিয়ে হিসাব করলে, ভোক্তা মূল্যসূচক বেড়েছে ৩.৪ শতাংশ, যা মে মাসের তুলনায় সামান্য বেশি।

অক্টোবরে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ইশিবা ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয় ও জনগণের অসন্তোষের মুখে পড়েছেন। বিশেষ করে চালের মূল্যবৃদ্ধি, এলডিপির বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ এবং ভঙ্গুর অর্থনীতি তার জনপ্রিয়তায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

প্রধানমন্ত্রী ইশিবার নেতৃত্বাধীন জোট গত অক্টোবরে নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়, যা গত দেড় দশকে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সবচেয়ে খারাপ নির্বাচনী ফলাফল হিসেবে বিবেচিত। সর্বশেষ জনমত জরিপ ইঙ্গিত দিচ্ছে, এবার উচ্চকক্ষেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে পারে শাসক জোট। এমনটি ঘটলে, দায়িত্ব নেওয়ার এক বছরের মধ্যেই ইশিবার পদত্যাগের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।

এই রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যেই ইশিবার ওপর নতুন চাপ তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনার বিষয়টি। আগামী ১ আগস্ট থেকে শুরু হতে যাওয়া ২৫ শতাংশ নতুন মার্কিন শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে, একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে মরিয়া জাপান। এর আগে থেকেই ট্রাম্প প্রশাসন জাপানি গাড়ি, অ্যালুমিনিয়াম ও স্টিল রপ্তানির ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জাপানের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে চাচ্ছেন। তিনি চাচ্ছেন, টোকিও যেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি পরিমাণে জ্বালানি, তেল, চাল ও গাড়ি আমদানি করে এবং জাপানি কোম্পানিগুলো যেন আমেরিকায় উৎপাদন বাড়ায়।

বাণিজ্য আলোচনায় অগ্রগতি আনতে প্রধানমন্ত্রী ইশিবা তার দূত রিওসেই আকাজাওয়াকে অন্তত সাতবার ওয়াশিংটনে পাঠিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।

চালের দামের এই অস্বাভাবিক উত্থানের পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, দুই বছর আগে দেশজুড়ে দীর্ঘমেয়াদি খরা ও অতিরিক্ত গরমের ফলে ফসল উৎপাদনে মারাত্মক ক্ষতি হয়। এতে চালের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেয়। সেই সুযোগে কিছু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরির জন্য চাল মজুত করতে শুরু করে, যাতে পরে উচ্চ দামে বিক্রি করে লাভ করা যায়।

এছাড়া গত বছর সম্ভাব্য এক ভয়াবহ ভূমিকম্পের গুজব ছড়িয়ে পড়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যেও আতঙ্ক তৈরি হয়, যার ফলস্বরূপ বহু মানুষ চাল কিনে মজুত করতে শুরু করে। যদিও সেই ভূমিকম্প বাস্তবে ঘটেনি।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে তার জরুরি খাদ্য মজুত বাজারে ছাড়তে শুরু করেছে। সাধারণত এসব মজুদ কেবল প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ছাড়া প্রকাশ্যে আনা হয় না।

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, জনসন্তোষ পুনরুদ্ধার এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আলোচনায় সাফল্য—এই তিন বড় চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে এখন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার জন্য সময়টা হয়ে উঠেছে অগ্নিপরীক্ষার মতো।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×