ভারতের রপ্তানিতে বড় ধাক্কা, যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকল না ভারতের আম
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৪:৩০ পিএম, ১৯ মে ২০২৫
.jpg)
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখে পড়েছে ভারত। আমদানির প্রয়োজনীয় নথিপত্রে অনিয়ম থাকার অভিযোগে ভারতের বড় একটা আমের চালান আটকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিমানবন্দরের কর্তৃপক্ষ।
সোমবার (১৯ মে) টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তত ১৫টি চালান ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে, যেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো এবং আটলান্টাসহ একাধিক শহরের বিমানবন্দরে পৌঁছেছিল।
প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, আমগুলোর গুণগত মান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আপত্তি ছিল না। এমনকি আমে কীটপতঙ্গ বা অন্যকোনো ক্ষতিকর উপাদান পাওয়ার তথ্যও পাওয়া যায়নি।
তবে সমস্যার সূত্রপাত হয়েছে পেস্ট কন্ট্রোল ও রেডিয়েশন ট্রিটমেন্টসংক্রান্ত নথিপত্রে। মার্কিন কর্মকর্তারা যেসব নির্দিষ্ট নথি দাবি করেছিলেন, সেগুলোতে ভুল বা অসম্পূর্ণতা ধরা পড়ে। এতে শুল্ক বিভাগ আমদানিকৃত আম গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়।
জানা গেছে, মুম্বাই থেকে রপ্তানির আগে আমগুলো ৮ ও ৯ মে ‘বিকিরণ প্রক্রিয়া’র (ইরিডিয়েশন প্রসেস) মধ্য দিয়ে গিয়েছিল। এ প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রিত রেডিয়েশন প্রয়োগ করে ফলের পচন রোধ ও কীটপতঙ্গ ধ্বংস করা হয়। কিন্তু সঠিকভাবে সেই প্রক্রিয়ার দলিল উপস্থাপন করতে না পারায় পুরো চালান আটকে যায়।
এই ঘটনার ফলে ভারতের আম রপ্তানিকারকদের বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, চালানগুলো ফেরত পাঠাতে হলে উচ্চ পরিবহন ব্যয় গুনতে হবে। আবার যুক্তরাষ্ট্রে ফেলে রাখলে সেগুলো পচে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই দোটানার মধ্যে পড়ে অনেক রপ্তানিকারক ফলগুলো যুক্তরাষ্ট্রেই ফেলে রাখার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আনুমানিকভাবে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি দাঁড়াতে পারে প্রায় ৫ লাখ ডলার।
প্রসঙ্গত, ভারতের আম রপ্তানির অন্যতম প্রধান গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। প্রতি বছর হাজার হাজার টন আম যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হয়, যার মধ্যে আলফানসো, কেসার ও বদ্রপুরি জাতের আম বিশেষ জনপ্রিয়। ফলে এ ধরনের ঘটনা শুধু তাৎক্ষণিক ক্ষতিই নয়, ভবিষ্যতে দুই দেশের কৃষিপণ্য বাণিজ্যে আস্থার সংকট তৈরি করতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনা ভারতীয় রপ্তানিকারকদের জন্য একটি সতর্কবার্তা। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ নথিপত্র প্রস্তুত করা এবং তা যাচাইবাছাই করার ক্ষেত্রে আরও কঠোর মনোযোগ দিতে হবে। সামান্য প্রশাসনিক ত্রুটির কারণে একটি বড় বাজারে প্রবেশের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেলে শুধু আর্থিক ক্ষতি নয়, সুনামও বিঘ্নিত হয়।
ভারত সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না দিলেও, সংশ্লিষ্ট রপ্তানিকারক সংগঠনগুলো মার্কিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমস্যার সমাধান খুঁজছে বলে জানা গেছে। একইসঙ্গে, ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে, সে জন্য ‘ডিজিটাল সার্টিফিকেশন সিস্টেম’ চালুর উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস এই ইস্যুটিকে গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছে। তারা বলছে, দুই দেশের মধ্যে কৃষিপণ্য রপ্তানিতে দীর্ঘদিনের সহযোগিতা রয়েছে এবং একে আরও শক্তিশালী করতে এমন ভুল বোঝাবুঝি দ্রুত নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন।