এবার এইচ-১বি ভিসা বিতর্কে মাস্কের সাথে সুর মেলালেন ট্রাম্প


December 2024/Musk Trump.jpg

যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি অর্থায়ন বিল পাস না করা নিয়ে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের কথায় সায় দিয়েছিলেন দেশটির নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। এবার দক্ষকর্মী ভিসা এইচ-১বি নিয়ে বিতর্কেও মাস্কের সঙ্গে সুর মেলালেন তিনি। বললেন, ‘আমি সব সময় এইচ-১ বি ভিসা পছন্দ করেছি, আমি সব সময় এই ভিসার পক্ষে ছিলাম।’ অথচ ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকার সময় এইচ-১বি ভিসা সীমিত করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

সেই ট্রাম্পই শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) নিউ ইয়র্ক পোস্ট পত্রিকায় বললেন, তিনি এই ভিসার পক্ষে ছিলেন। ট্রাম্প বলেন, ‘আমার সম্পত্তিতে অনেক এইচ-১বি ভিসা আছে। আমি এইচ-১বি ভিসায় বিশ্বাস করি। অনেক বারই আমি এটি কাজে লাগিয়েছি। এটি একটি খুব ভাল কর্মসূচি।’

টেসলা, স্পেসএক্স এবং এক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক এইচ-১বি ভিসার পক্ষ সমর্থন করে স্যোশাল মিডিয়ায় একের পর এক পোস্ট দেওয়ার পর ট্রাম্প এই ভোল পাল্টালেন। বিদেশি দক্ষ প্রযুক্তি কর্মীদেরকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসতে তাদের জন্য এইচ-১বি ভিসার পক্ষ সমর্থনে যুদ্ধেও নামবেন বলে শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) অঙ্গীকার করেন ইলন মাস্ক।

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার পাওয়া ইলন মাস্কের জন্ম আদতে দক্ষিণ আফ্রিকায়। ইলন নিজেও যুক্তরাষ্ট্রে এক সময় এইচ-১বি ভিসায় ছিলেন। তার টেসলা কোম্পানি এই ভিসার আওতায় কর্মী ভাড়া করেছে। চলতি বছর টেসলায় ৭২৪ কর্মী এ ভিসায় কাজ পেয়েছে। সাধারণত তিন বছরের জন্য এই ভিসা দেওয়া হয়। তবে ভিসা প্রাপ্তরা এর মেয়াদ বাড়াতে পারে কিংবা গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারে।

ইলন মাস্ক হবু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনে ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’ বিভাগের প্রধান হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যয় কাটছাঁটের পরামর্শ দিলেও দক্ষ কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে আরও এইচ-১বি ভিসিা মঞ্জুরের পরামর্শ দিচ্ছেন।

কিন্তু, তার এই পরামর্শ অনলাইনে বিতর্ক উস্কে দিয়েছে। বিশেষ করে ট্রাম্পের বেশ কিছু সমর্থক ও অভিবাসনবিরোধীরা যারা এইচ-১বি ভিসা কর্মসূচি বাতিলের পক্ষে তারা এ পরামর্শ মানতে রাজি নন। গত শুক্রবার ট্রাম্পের মিত্র ও আস্থাভাজন স্টিভ ব্যানন এইচ-১বি ভিসা সমর্থনের জন্য ইলন মাস্কের সমালোচনা করেছেন এবং অভিবাসনকে পশ্চিমা সভ্যতার জন্য হুমকি বলে বর্ণনা করেছেন।

এর জবাবে মাস্ক ও অন্যান্য আরও ধনকুবের বৈধ অভিবাসন এবং অবৈধ অভিবাসন নিয়ে আলাদাভাবে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন।

ডনাল্ড ট্রাম্প এবার দ্বিতীয় বারের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হয়েই কঠোর অভিবাসন নীতি কার্যকরের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। সব অবৈধ অভিবাসীকে দেশ থেকে বের করে দেবেন বলে তিনি জানিয়েছেন। আর কঠোরভাবে অভিবাসন দমন করে আমেরিকানদের জন্য বেশি কাজের ব্যবস্থা করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প।

এইচ-১বি ভিসার কারণে ব্যবসায়-কাজ আমেরিকানদের বদলে নিম্ন মজুরির বিদেশি কর্মীদের দখলে চলে যায় এ যুক্তিতে ট্রাম্প তার প্রেসিডেন্সির প্রথম মেয়াদে এই ভিসা কর্মসূচির বিপক্ষে ছিলেন। কিন্তু ইলন মাস্ক বারবারই তার কথায় এটি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ অভিবাসনের পক্ষে।

২১ শতাব্দীর অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি ইলন মাস্ক যুক্তরাষ্ট্রে গত নভেম্বরের নির্বাচনে খোলাখুলিভাবে ট্রাম্পকে সমর্থন করেছিলেন এবং তার পক্ষে প্রচার চালিয়েছিলেন। ট্রাম্পকে ১১ কোটি ৯০ লাখ ডলার অনুদানও দেন মাস্ক। ট্রাম্পও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের পর তার নতুন প্রশাসনে মাস্ককে জায়গা দিতে দেরি করেননি।

মাস্ক এই অবস্থানে উঠে আসার পর থেকেই রাজনীতিতে তাকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় উঠে আসতে দেখা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট থেকে শুরু করে প্রায় গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়েই মাস্ক জোরালভাবে তার মত তুলে ধরছেন। আর ট্রাম্পও তার সঙ্গেই সুরে সুর মিলিয়ে যাচ্ছেন। এইচ-১বি ভিসা নিয়ে বিতর্কে মাস্ককে ট্রাম্পের সমর্থন এর সর্বসাম্প্রতিক উদাহরণ।

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×