গাজায় কীভাবে নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়, ইসরায়েলি সেনার বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৯:৪০ পিএম, ০৭ জুলাই ২০২৫

গাজা উপত্যকায় দায়িত্ব পালন করা এক ইসরায়েলি রিজার্ভ সেনা স্কাই নিউজকে দেওয়া এক বিরল সাক্ষাৎকারে এমন কিছু ভয়াবহ তথ্য প্রকাশ করেছেন, যা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর (আইডিএফ) যুদ্ধকৌশল এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্নে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ওই সেনার দাবি গাজায় তাদের ইউনিটকে প্রায়ই আদেশ দেওয়া হতো, "সীমারেখায়" কেউ প্রবেশ করলেই গুলি করে হত্যা করতে হবে, সে বেসামরিক নাগরিক হোক কিংবা নয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সেনা বলেন, একটি নির্দিষ্ট এলাকাকে ‘নিরাপত্তা সীমা’ হিসেবে চিহ্নিত করে দেওয়া হতো। সেনাদের জানানো হতো যে কেউ এই সীমা অতিক্রম করলে তাকেই হত্যা করতে হবে, তার বয়স, লিঙ্গ বা অস্ত্রধারিতা বিবেচ্য নয়।
তিনবার গাজায় দায়িত্ব পালন করা ওই সেনা জানান, নিজের চোখে তিনি বহু নিরস্ত্র সাধারণ মানুষকে গুলিতে নিহত হতে দেখেছেন। এসব হত্যাকাণ্ড ছিল ইচ্ছাকৃত এবং নির্বিচার, যা নির্ভর করত সংশ্লিষ্ট কমান্ডারের সিদ্ধান্তের ওপর।
তিনি ছিলেন আইডিএফ-এর ২৫২তম ডিভিশনের একজন সদস্য এবং গাজার ভেতরে প্রতিষ্ঠিত নেতসারিম করিডোরে দুইবার মোতায়েন হয়েছিলেন। এই করিডোর গাজা উপত্যকাকে উত্তর ও দক্ষিণে ভাগ করে ফেলে এবং ইসরায়েলি বাহিনীর কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে।
ওই সেনা জানান, তারা একটি ফিলিস্তিনি পরিবার ছেড়ে যাওয়া বাড়িতে অবস্থান নিয়ে তার চারপাশে ‘অদৃশ্য সীমারেখা’ নির্ধারণ করেন, যেখানে গাজাবাসীদের প্রবেশ ছিল নিষিদ্ধ। কিন্তু প্রশ্ন তোলেন তিনি “এই সীমার কথা গাজাবাসীরা জানবে কীভাবে?”
তিনি আরও বলেন, সাইকেল চালাতে চালাতে এক কিশোর কিংবা ধাতব জিনিস কুড়াতে আসা এক বৃদ্ধ যেই এই সীমারেখা পেরিয়েছে, তাকেই গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
সাক্ষাৎকারে সেনাটি অভিযোগ করেন, অনেক ইসরায়েলি সৈন্যের মধ্যে এমন বিশ্বাস গড়ে উঠেছে যে, “গাজার কেউই নির্দোষ নয়।” ফলে, অস্ত্র না থাকা সত্ত্বেও বহু বেসামরিককে সন্ত্রাসী ভেবে হত্যা করা হয়।
একটি ঘটনার বর্ণনায় তিনি জানান, সীমা অতিক্রম করা এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে যখন একজন লোক মরদেহ নিতে আসে, প্রথমে তাকে আটক করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই নতুন নির্দেশ আসে "যদি কেউ আসে, গুলি করো।"
এই সেনার ভাষায়, “এটা যেন ওয়াইল্ড ওয়েস্ট। প্রতিটি কমান্ডার তার মতো করে সিদ্ধান্ত নেয়। যুদ্ধাপরাধ হলেও কোনো জবাবদিহি নেই।”
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলে সেনাবাহিনী ‘জাতীয় গর্বের প্রতীক’, তাই সমালোচকদের অনেক সময় ‘দেশদ্রোহী’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়। তবুও তিনি মুখ খুলেছেন “কারণ, আমি মনে করি আমি কিছু অন্যায়ের অংশ ছিলাম। এখন সত্য বলেই সেই বোঝা হালকা করতে চাই।”
তিনি বলেন, “যুদ্ধটি ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের জন্য একইভাবে ধ্বংসাত্মক। এটি বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু ইসরায়েলি সমাজ আত্মসমালোচনায় অক্ষম। তারা ভাবে যুদ্ধই সমাধান, অথচ বুঝতে পারে না এর পরিণাম কতটা ভয়াবহ।”
সেনাটির বক্তব্য অনুযায়ী, যদি ইসরায়েলিরা বাস্তব পরিস্থিতি জানতো, অনেকেই এই যুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিত।
স্কাই নিউজ সেনার এই দাবিগুলোর বিষয়ে আইডিএফ-এর বক্তব্য জানতে চাইলে তারা জানায় "আইডিএফ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলে এবং বেসামরিক হতাহতের ঝুঁকি কমাতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে। কেবলমাত্র সামরিক লক্ষ্যে হামলা চালানো হয়।"
ঢাকাওয়াচ/এমএস