আগামী সপ্তাহেই ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংকে আসছে ৫ প্রশাসক
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০১:২৩ পিএম, ০৩ অক্টোবর ২০২৫

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে এক নজিরবিহীন অধ্যায় রচিত হতে চলেছে। দেশের পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক বেসরকারি ব্যাংক একীভূত হয়ে গঠিত হতে যাচ্ছে একটি নতুন আর্থিক প্রতিষ্ঠান; ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক। এ ঐতিহাসিক একীভূতকরণের প্রাক্কালে প্রতিটি ব্যাংকে একজন করে প্রশাসক নিয়োগ দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা আগামী সপ্তাহেই কার্যকর হতে পারে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসকদের নাম ইতোমধ্যে নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. শওকাতুল আলম এক্সিম ব্যাংকে, নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান দিদার সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে, নির্বাহী পরিচালক মো. সালাহ উদ্দিন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে, সিলেট অফিসের পরিচালক মোহাম্মদ আবুল হাসেম ইউনিয়ন ব্যাংকে এবং টাঁকশাল বিভাগের পরিচালক মো. মোকসুদুজ্জামান গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করবেন।
প্রশাসকদের সহায়তায় প্রতিটি ব্যাংকে অতিরিক্ত পরিচালক, যুগ্ম পরিচালক ও উপপরিচালকের সমন্বয়ে একটি টিম কাজ করবে। নিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন, এবং খুব শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘একীভূতকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি পরিচালনা পর্ষদের সভায় যুক্ত করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপন জারির পরেই প্রশাসকেরা দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।’
পাঁচটি ব্যাংকের বর্তমান অবস্থান যে কতটা নাজুক, তা প্রকাশ পেয়েছে ঋণ ও খেলাপির পরিসংখ্যানে। সম্মিলিতভাবে ব্যাংকগুলোর মোট আমানতের পরিমাণ এখন প্রায় ১ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা, অথচ ঋণের পরিমাণ গিয়ে ঠেকেছে ১ লাখ ৯২ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকায়। এই বিপুল ঋণের মধ্যে ৭৬ শতাংশই খেলাপি, যা ব্যাংক খাতে গভীর সংকটের ইঙ্গিত দেয়।
ব্যাংকভেদে খেলাপির হার আরও উদ্বেগজনক। ইউনিয়ন ব্যাংকে খেলাপি ঋণের হার ৯৮ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটিতে ৯৭, গ্লোবাল ইসলামীতে ৯৫, সোশ্যাল ইসলামীতে ৬২ দশমিক ৩ এবং এক্সিম ব্যাংকে ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ।
এই সংকট থেকে উত্তরণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী প্রয়োজন ৩৫ হাজার ২০০ কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন। এ অর্থের মধ্যে সরকার সরবরাহ করবে ২০ হাজার ২০০ কোটি টাকা, আমানত বিমা ট্রাস্ট থেকে আসবে ৭ হাজার ৫০০ কোটি এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আরও ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার শেয়ার তোলা হবে। সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়ায় সরকারের সম্মতিও ইতোমধ্যে নিশ্চিত হয়েছে।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, ‘এটি ব্যাংক খাত সংস্কারের নতুন অধ্যায়। তবে চেয়ারম্যান ও এমডি পদে সঠিক নেতৃত্ব বেছে না নিলে আবারও রাজনৈতিক প্রভাবে পথচ্যুত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে।’