মুরগির চেয়েও মরিচ-বেগুনের দাম বেশি, সবজির দামে নাভিশ্বাস


মুরগির চেয়েও মরিচ-বেগুনের দাম বেশি, সবজির দামে নাভিশ্বাস

সাধারণ ব্রয়লার মুরগির চেয়েও কাঁচামরিচ আর গোলবেগুনের দাম এখন অনেক বেশি। পূজোর মৌসুম আর টানা বৃষ্টির প্রভাব একত্রে পড়ে রাজধানীর সবজির বাজারে জ্বালানি ঢেলেছে। এক মাসের ব্যবধানে বেশিরভাগ সবজির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা কেজিতে, তবে কাঁচামরিচ আর বেগুনের দাম বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণে।

গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচামরিচের দাম পৌঁছেছে ৩০০ টাকা কেজিতে, আর গোলবেগুনের দাম দাঁড়িয়েছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা। যেখানে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা কেজিতে, সেখানে মরিচ-বেগুনের দর তার চেয়েও ৪০ টাকার বেশি।

শান্তিনগর বাজারে ২৫০ গ্রাম কাঁচামরিচ কিনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান জাহিদুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা। তিনি বললেন, “বাজারে পণ্যের কোনো ঘাটতি নেই, তবুও বিক্রেতারা বৃষ্টিকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এটা আমাদের মতো গরিব মানুষের জন্য ভীষণ কষ্টদায়ক।”

গত ৫ সেপ্টেম্বরের তুলনায় দাম বাড়ার প্রবণতাই বলছে প্রকৃত অবস্থা। ওই সময় এক কেজি গোলবেগুনের দাম ছিল ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, আর এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০০ টাকারও বেশি। এক মাস আগে মরিচ বিক্রি হচ্ছিল ১৬০ থেকে ২০০ টাকায়, এখন তা ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত।

বৃষ্টির কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়াই এ অবস্থার প্রধান কারণ বলে জানিয়েছেন খুচরা বিক্রেতারা। তাদের ভাষ্য, মাঠে পানি জমে থাকায় কৃষকরা সবজি তুলতে পারছেন না। ফলে বাজারে জোগান কম, আর চাহিদা বেশি।

শান্তিনগর কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী মো. রাকিব জানান, “আমরা তো প্রতিদিন কারওয়ান বাজার থেকে সবজি কিনে আনছি। পূজার সময় চাহিদা বেশি হয়, আর ভারতের দিক থেকেও কাঁচামরিচ কম আসছে। তাই দাম বাড়ছে।”

পাইকারি ও খুচরা বাজারের দামে বিশাল পার্থক্যও ভোক্তাদের ক্ষোভের আরেক কারণ। কারওয়ান বাজারের পাইকারি দামে সবজি কিনলে প্রতি কেজিতে অন্তত ২০ থেকে ৩০ টাকা কম খরচ হয়। অথচ খুচরা বিক্রেতারা সেই একই পণ্য ভোক্তাদের কাছে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছেন।

বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি ইমরান মাস্টার মনে করেন, বর্ষাকালে নিচু জমিতে সবজি উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটে। “বৃষ্টির সময় গাছ মরে যায়, জমিতে পানি দাঁড়িয়ে থাকে। গ্রামে বা শহরের ছাদে চাষ হলেও তা চাহিদা পূরণে যথেষ্ট নয়। পাহাড়ি এলাকাগুলোতে পতিত জমিতে সবজি চাষ বাড়াতে পারলে সরবরাহ বাড়বে,” বলেন তিনি।

সবজি বাজারের এই অস্থিরতা নিয়ে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, “প্রতি বছর এই সময় এক ধরনের সিন্ডিকেট বাজারকে অস্থিতিশীল করে তোলে। সরকারের তদারকি দুর্বল হলে তাদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়।”

তিনি আরও জানান, “বাজার ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা জরুরি। কৃষকরা যেন সরাসরি ভোক্তার কাছে পণ্য বিক্রি করতে পারেন, সে জন্য রাজধানীর ৩০০ ফিট এলাকায় ‘কৃষকের বাজার’ চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে ভোক্তারা ন্যায্য দামে পণ্য পাবেন।”

সব মিলিয়ে বলা যায়, হঠাৎ করে চড়া হয়ে ওঠা সবজির দামে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি। সরকারি নজরদারির ঘাটতি আর বৃষ্টিকে পুঁজি করে ব্যবসায়ীরা যা করছেন, তা অনেকের কাছে ন্যায্যতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×