২০২৬-এর শুরু থেকেই নতুন পে স্কেলে বেতন পাবেন সরকারি চাকরিজীবীরা
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ১১:২১ এম, ০১ অক্টোবর ২০২৫

সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো কার্যকরের ক্ষেত্রে আর কোনো অপেক্ষা নয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদকালেই গ্যাজেট প্রকাশের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়নের প্রস্তুতি চলছে, যাতে পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারের জন্য বিষয়টি ঝুলে না থাকে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ মঙ্গলবার নিশ্চিত করেছেন, "এই সরকারের মেয়াদেই নতুন পে স্কেলের বাস্তবায়ন করা হবে। কীভাবে এটা এই মেয়াদেই কার্যকর হবে সেটাও দেখবেন।" অর্থাৎ, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আর দেরি নয়। তিনি জানান, আগামী বছরের মার্চ অথবা এপ্রিল থেকে যদি নতুন পে স্কেল কার্যকর করা হয়, তাহলে সেটির জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখতে হবে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটেই। এই বাজেট সংশোধনের কাজ শুরু হবে ডিসেম্বর থেকে।
সরকারি কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণে চলতি বছরের ২৪ জুলাই গঠিত হয় পে কমিশন। এর নেতৃত্বে আছেন সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খান। তিনি জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই কমিশনের সুপারিশ পেশ করা হবে।
তবে কমিশনের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, এখনো সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন গ্রেড এবং গড় হারে বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। বর্তমানে ১ম গ্রেড এবং ২০তম গ্রেডের মধ্যে বেতনের অনুপাত প্রায় ১০:১। নতুন কাঠামোতেও এ অনুপাত ৮:১ থেকে ১০:১-এর মধ্যে রাখার সুপারিশ করা হবে, যা ভারতের মতো অনেক দেশের অনুরূপ।
কমিশন বেতন কাঠামোর পাশাপাশি বিভিন্ন ভাতা বাড়ানোর দিকেও নজর দিয়েছে। চিকিৎসা ভাতা বাড়ানোর একটি প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এই ভাতা মাসে ১,৫০০ টাকা, যা বাড়ানোর পাশাপাশি অবসরের পর অতিরিক্ত সুবিধা রাখার কথাও ভাবা হচ্ছে। একইভাবে সন্তানের শিক্ষা ভাতা বৃদ্ধির সুপারিশও যুক্ত করা হচ্ছে।
২০১৫ সালে ফরাসউদ্দিন কমিশনের সুপারিশে যেভাবে টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল করে স্বয়ংক্রিয় পদোন্নতির ব্যবস্থা চালু হয়, এবারও কমিশন পদোন্নতি সহজ করার প্রস্তাব দিতে পারে।
বর্তমানে জাতীয় বেতন কাঠামোর আওতায় প্রায় ১৪ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, বিদ্যুৎ কোম্পানি, বিচার বিভাগ এবং সশস্ত্র বাহিনীর রয়েছে আলাদা বেতন কাঠামো। এসব কাঠামোর সঙ্গে জাতীয় কাঠামোর সামঞ্জস্য রাখার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে কমিশন, যদিও ভাতা ও অন্যান্য সুবিধায় কিছু পার্থক্য থাকবে।
কমিশন মনে করছে, নতুন পে স্কেল প্রবর্তনের ফলে বেসরকারি খাতেও কিছুটা চাপ সৃষ্টি হতে পারে, বিশেষ করে বিনিয়োগের দুর্বল পরিবেশে। এজন্য কমিশন আগামী অক্টোবর মাসে ব্যবসায়ী চেম্বার ও সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করবে। ইতোমধ্যে সরকার পোশাক শিল্পসহ ৪৫টি খাতে শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি কাঠামো নির্ধারণ করেছে। কমিশনের লক্ষ্য থাকবে এসব কাঠামোর সঙ্গে নতুন জাতীয় বেতন কাঠামোর সঙ্গতি রাখা।
বিশেষজ্ঞ পেশাজীবীদের জন্য প্রণোদনা হিসেবে বিশেষ ভাতা প্রবর্তনের বিষয়েও চিন্তা করছে কমিশন। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী ও উদ্ভাবকদের জন্য নতুন কাঠামোতে থাকবে এ ভাতা। এক কমিশন সদস্য বলেন, "দেশে তরুণদের মধ্যে ডাক্তার, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী ও গবেষক হওয়ার আগ্রহ কমে গেছে। অনেকে চিকিৎসা বা প্রকৌশল পড়লেও অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। ফলে এসব বিশেষায়িত ক্ষেত্রে দক্ষ জনবল কমছে এবং বাংলাদেশ উদ্ভাবনে পিছিয়ে যাচ্ছে। তাই কমিশন সর্বসম্মতিক্রমে এ খাতে বিশেষ ভাতার প্রস্তাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।"
তিনি আরও জানান, সশস্ত্র বাহিনীর মতো কিছু খাত অতিরিক্ত ভাতা পায়, তাই মেধাবীদের উদ্ভাবনী খাতে টানতে একই ধরনের উদ্যোগ প্রয়োজন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা পাচ্ছেন ২০১৫ সালের পে স্কেল অনুযায়ী বেতন। এই কাঠামোর আওতায় প্রায় ১৫ লাখ কর্মচারী থাকলেও, সশস্ত্র বাহিনী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের যুক্ত করলে এই সংখ্যা পৌঁছায় ২৪ লাখে।
২০২৪ সালের নভেম্বরে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর পুনরায় ভাতা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে নতুন মহার্ঘ ভাতা চালুর চেষ্টা হলেও, ব্যাপক সমালোচনার মুখে তা বাতিল হয়। পরবর্তীতে বর্তমান অর্থবছরের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ১০ শতাংশ বিশেষ সুবিধা রাখা হয়।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮৪ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা, যা আগের বছরের ৮২ হাজার ৯৭৭ কোটির তুলনায় বেশি।