স্মার্ট বলেই কোম্পানিগুলো এত অর্থ পাচার করতে পেরেছে: অর্থ উপদেষ্টা


স্মার্ট বলেই কোম্পানিগুলো এত অর্থ পাচার করতে পেরেছে: অর্থ উপদেষ্টা

দেশের করপোরেট খাতের আর্থিক জালিয়াতি ও অর্থ পাচারের ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তার মতে, কোম্পানিগুলো সরকার থেকেও অনেক বেশি 'স্মার্ট' হওয়ার কারণেই তারা জটিল কৌশলে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করতে সক্ষম হয়েছে।

সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) কার্যালয়ে ‘ইআরএফ ইনস্টিটিউটের একাডেমিক কার্যক্রম উদ্বোধন’ ও ‘করপোরেট সেক্টরে আর্থিক স্বচ্ছতা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

ড. সালেহউদ্দিন বলেন, "কোম্পানিতে যে কত ধরনের তেলেসমতি হয় আমি তো টের পাচ্ছি। কোম্পানিগুলো ইকুয়ালি ইকুয়ালি জিনিয়াস। টাকা এমনি পাঠায় না, লেয়ারিং করে টাকা পাচার করে। টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রথমে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়, আরেক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়, এভাবে পাচার হয়।"

তিনি আরও বলেন, "কোম্পানিগুলো সরকারের চেয়ে স্মার্ট। এ কারণেই তারা এত অর্থ পাচার করতে পেরেছে।"

বাংলাদেশ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন এই অর্থনীতিবিদ। তার ভাষায়, "গতকাল এক অনুষ্ঠানে একজন অন্তর্বর্তী সরকারকে অর্থব-টর্থব বলে অনেক কথা বলেছেন। তখন বলেছে, দিস ইজ দ্য ন্যারিটিভ অব সাম পিপল হু আর হেল্পিং দ্য ফ্যাসিস্ট। এই ন্যারিটিভগুলো বলে অন্তর্বর্তী সরকারকে আরও দুর্বল করছে, ফ্যাসিস্টকে আরও উৎসাহ দিচ্ছে। পরে বলেছে, টাকা পয়সা মারেনি, ব্যাংককে আরও স্ট্যাবল করেছে, রিজার্ভ বেড়েছে। আমরা যে সব ভালো করছি তা নয়। বাইরে কিন্তু বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অত্যন্ত ভালো। আমি তো অনেক ধরনের ডোনারের সঙ্গে কথা বলি, তারা কিন্তু ইতিবাচক।"

নিরীক্ষা কার্যক্রম প্রসঙ্গে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, "কেবল হিসাব-নিকাশে সীমাবদ্ধ না থেকে নিরীক্ষকদের উচিত হবে অর্থের উৎস এবং তা সৃষ্টির প্রক্রিয়া গভীরভাবে খতিয়ে দেখা।"

গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, "কিছু গণমাধ্যম এমন সব খবর পরিবেশন করে যা কখনও কখনও সরকারকে দুর্বল করে বা ফ্যাসিস্ট শক্তিকে প্রভাবিত করে। সাংবাদিকদের দায়িত্বশীল, গঠনমূলক ও তথ্যভিত্তিক রিপোর্টিংয়ে মনোযোগী হতে হবে। যখন আমরা ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরি, তখন আস্থা তৈরি হয়, কিন্তু বেপরোয়া সংবাদ আস্থাহীনতা তৈরি করে।"

সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের বহু পেশাজীবীর দেশপ্রেম ও নিষ্ঠার প্রশংসা করেন সালেহউদ্দিন। তিনি আরও বলেন, "গণমাধ্যম ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও কাঠামোবদ্ধ ও শক্তিশালী পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।"

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা। সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন অর্থ সচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার, ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) এর চেয়ারম্যান ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন ভূঁইয়া এবং ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) সভাপতি এন কে এ মবিন।

অর্থ সচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, "বাজেট তৈরিতে অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের পরামর্শ সরকার মূল্যায়ন করে থাকে।" তিনি জানান, গত বছর মুদ্রাস্ফীতির চাপে সরকার বড় বাজেট পরিকল্পনা করলেও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে তা কমিয়ে তুলনামূলক ছোট ও বাস্তবসম্মত বাজেট করা হয়। তার কথায়, "আমরা বড় বাজেট ভেবেছিলাম, কিন্তু আপনাদের পরামর্শে তুলনামূলক ছোট ও বাস্তবসম্মত বাজেট করেছি। এ কৃতিত্ব আপনাদেরই।"

তিনি আরও বলেন, "সরকার ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে সরাসরি সংযোগ সীমিত হলেও তাদের মতামত নীতিনির্ধারণে ভবিষ্যতেও গুরুত্ব পাবে।"

প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপনকে দেশের সক্ষমতা বৃদ্ধির দিক হিসেবে উল্লেখ করে সচিব বলেন, এটি অর্থনৈতিক শাসন ও নীতিনির্ধারণকে আরও কার্যকর করে তুলবে।

এফআরসি চেয়ারম্যান ড. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, "করপোরেট খাতে স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠার জন্য অডিট রিপোর্ট হচ্ছে প্রাথমিক ও গুরুত্বপূর্ণ দলিল। সঠিক আর্থিক প্রতিবেদন থাকলে ব্যাংক সহজেই ঝুঁকি নিরূপণ করতে পারে এবং ঋণ আদায়ে আস্থা অর্জন করে।"

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×