শিল্পখাতের ৯০ শতাংশ এসএমই, তবে ঋণ ও প্রযুক্তিতে চ্যালেঞ্জ বড় বাধা
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৭:৩২ পিএম, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দেশের শিল্পখাতের প্রায় ৯০ শতাংশ অংশ দখল করেও বাংলাদেশের ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প (সিএমএসএমই) বিভিন্ন সমস্যার কারণে অগ্রগতিতে বাধাগ্রস্ত বলে মনে করছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। বিশেষ করে ঋণসহায়তার অভাব, দক্ষ জনশক্তির ঘাটতি, প্রযুক্তির দিক থেকে পিছিয়ে থাকা এবং কঠোর শর্তাবলিই এই খাতের অগ্রযাত্রার বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ডিসিসিআই মিলনায়তনে ‘সিএমএসএমই খাতের ব্র্যান্ডিং ও বিপণন চ্যালেঞ্জ: রপ্তানির সম্ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনায় এসব তথ্য উঠে আসে। অনুষ্ঠানে প্রধান প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ, যিনি বলেন, “দেশের শিল্পখাতের প্রায় ৯০ শতাংশ সিএমএসএমই, যেখানে প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ মানুষ কর্মরত। জিডিপিতে অবদান ২৮ শতাংশ হলেও শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় এই খাতের অবদান প্রায় ৫০ শতাংশ।”
তাসকীন আহমেদ আরও বলেন, “ঋণ সহায়তার অভাব, সমন্বয়হীনতা, দক্ষ জনশক্তির ঘাটতি, প্রযুক্তি ব্যবহারে পিছিয়ে থাকা এবং কঠিন শর্তাবলি এসএমই উদ্যোক্তাদের অগ্রযাত্রায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কারণে বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে উৎপাদন খরচ বাড়বে। এই পরিস্থিতিতে উদ্যোক্তাদের জন্য খরচ কমানো, উদ্ভাবন ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করে আন্তর্জাতিক বাজারে টিকিয়ে থাকার বিকল্প নেই।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান। তিনি বলেন, “নিজেদের বৈশ্বিক ব্র্যান্ড না থাকায় বাংলাদেশের রপ্তানি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাড়ছে না। ব্র্যান্ডিংয়ের পাশাপাশি পণ্যের মান, মেধাস্বত্ব ও আন্তর্জাতিক বাজারে আস্থার পরিবেশ গড়ে তোলার উপর জোর দিতে হবে।”
বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান আরিফ।
বিসিক চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “আকর্ষণীয় প্যাকেজিং ও আন্তর্জাতিক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে পণ্যের অন্তর্ভুক্তি বাড়ানো জরুরি। এ ছাড়া উদ্যোক্তাদের জন্য শিল্পপার্ক, আর্থিক সহায়তা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।”
ইপিবি ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান আরিফ জানান, “শিগগিরই রপ্তানি ইকো-সিস্টেম ও সিএমএসএমই হেল্প ডেস্ক চালু হবে।” তিনি বলেন, “দেশের ইতিবাচক ব্র্যান্ডিংয়ের পাশাপাশি ভোক্তাদের অভিরুচি ও আগ্রহের দিকটি গুরুত্ব দিতে হবে।”
আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, বিপিজিএমইএ সভাপতি শামীম আহমেদ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. রাজ্জাকুল ইসলাম, ক্রিয়েশন লিমিটেডের এমডি মো. রাশেদুল করিম মুন্না, বাংলাদেশ জুট গুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম পিন্টু এবং হাত বাক্স-এর প্রধান নির্বাহী মো. শাফাত কাদের।
বক্তারা এসএমই খাতের উন্নয়নে পণ্যের সনদ ও কমপ্লায়েন্স সার্টিফিকেশন, উদ্ভাবনী প্রযুক্তির প্রয়োগ, সরকার ও বেসরকারি সংস্থার সমন্বয়, আন্তর্জাতিক বাজারে ক্লাস্টার উন্নয়ন এবং ব্র্যান্ডিং জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।