ডিএসই ও বিএপিএলসি’র মধ্যে বৈঠক
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৩:২৯ পিএম, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি)-এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর নিকুঞ্জে অবস্থিত ডিএসই টাওয়ারে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ডিএসই’র পরিচালনা পর্ষদ এবং বিএপিএলসি’র নির্বাহী কমিটির সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। ডিএসই’র পক্ষ থেকে সভায় নেতৃত্ব দেন চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম এবং বিএপিএলসি’র পক্ষ থেকে সভাপতিত্ব করেন প্রেসিডেন্ট রূপালি হক চৌধুরী।
বৈঠকের শুরুতেই ডিএসই’র চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম এই সভাকে "ঐতিহাসিক" বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, এটাই প্রথমবারের মতো তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বৃহত্তম সংগঠন বিএপিএলসি’র সঙ্গে ডিএসই পরিচালনা পর্ষদের আনুষ্ঠানিক বৈঠক। তিনি রূপালি হক চৌধুরীর নেতৃত্বে নির্বাহী কমিটির সকল সদস্যকে অভিনন্দন জানান।
চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, দেশের পুঁজিবাজার এখনও পর্যন্ত জাতীয় অর্থনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি। দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও অবহেলার কারণে বাজার সংকুচিত হয়ে পড়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু ইতিবাচক অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে। তিনি জানান, সরকারের পক্ষ থেকে পুঁজিবাজারে গতি আনার লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায়) ড. আনিসুজ্জামানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং চলতি বাজেটেও বাজার উন্নয়নে বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।
তিনি আরও বলেন, বাজারে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ আন্তরিকভাবে কাজ করছে। ডিএসই নিজেও ইতিবাচক পরিবর্তনের লক্ষ্যে আইপিও প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং তালিকাভুক্তির পরবর্তী কমপ্লায়েন্স সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর সমাধানে রেগুলেটরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।
সভায় বিএপিএলসি’র প্রেসিডেন্ট রূপালি হক চৌধুরী বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর স্বার্থ সংরক্ষণ এবং বাজারে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে বিএপিএলসি সবসময় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ডিএসই’র সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ দেশের পুঁজিবাজারকে আরও সুসংগঠিত ও গতিশীল করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি জানান, সংগঠনটি এরই মধ্যে পুঁজিবাজার উন্নয়নের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ড. আনিসুজ্জামান, কমিশন এবং সরকারের উচ্চপর্যায়ের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে।
তিনি বলেন, দেশের পুঁজিবাজারকে আরও বড় করতে হলে সমস্যার চেয়ে সমাধানের উপায় নিয়ে বেশি আলোচনা জরুরি। নতুন নতুন আইডিয়া ও ব্যবসায়িক পরিকল্পনা দেখে যদি ছোট কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনা যায়, তাহলে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসবে। পাশাপাশি তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য কমপ্লায়েন্স প্রক্রিয়া সহজ করা প্রয়োজন।
আলোচনায় বিএপিএলসি’র প্রতিনিধিরা বাজারের স্বচ্ছতা ও সুশাসন, লিস্টিং প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা, কর কাঠামোর বৈষম্য, আইপিও প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতা ও উপযুক্ত মূল্যায়নের অভাব, তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্যাটাগরি ও গুণগত কোম্পানির তালিকাভুক্তির জন্য গ্রীন চ্যানেল চালুর প্রয়োজনীয়তা, রেগুলেটরদের মধ্যে সমন্বয়, নীতিনির্ধারক ও নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে নিয়মিত সংলাপ, কোম্পানির মনিটরিং প্রক্রিয়া এবং ইউনিফাইড ডিজিটাল রিপোর্টিং সিস্টেম চালুর প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।
ডিএসই’র চেয়ারম্যান বলেন, সঠিক প্রাইসিং নিশ্চিত করা গেলে ভালো উদ্যোক্তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে পুঁজিবাজারে আসবে এবং আন্ডাররাইটাররা প্রক্রিয়াটির চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স হিসেবে কাজ করবে। সংশোধিত আইপিও পদ্ধতি মন্দ কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তি ঠেকাতে সহায়তা করবে, পাশাপাশি গ্রীন চ্যানেল ও ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে দ্রুত আইপিও অনুমোদন দেওয়ার পথ সুগম হবে।
তিনি আরও জানান, এজিএম নির্বিঘ্নে সম্পাদনের জন্য ডিজিটাল বা হাইব্রিড পদ্ধতির আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সংস্থা ও অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যে সমন্বয় করে একটি সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার মাধ্যমে বাজার সংশ্লিষ্ট সমস্যাগুলোর কার্যকর সমাধান সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বৈঠকে ডিএসই’র পরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ কামরুজ্জামান (অবঃ), সৈয়দ হাম্মাদুল করীম, মোহাম্মদ শাহজাহান, মিনহাজ মান্নান ইমন, রিচার্ড ডি রোজারিও এবং ডিএসই’র প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আসাদুর রহমান, এফসিএস উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের শেষে উভয় পক্ষ একমত পোষণ করেন যে, সমন্বিত প্রচেষ্টা ও গঠনমূলক সহযোগিতার মাধ্যমেই বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী, স্বচ্ছ ও টেকসই পুঁজিবাজার গড়ে তোলা সম্ভব। ডিএসই ভবিষ্যতেও বিএপিএলসি’র সঙ্গে যৌথভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে।