নগদ অর্থের ব্যবহার কমাতে আসছে একীভূত তাৎক্ষণিক পেমেন্ট সিস্টেম: গভর্নর
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৫:২০ পিএম, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দেশে ডিজিটাল লেনদেনকে আরও গতিশীল করতে এবং নগদ টাকার ওপর নির্ভরতা কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সমন্বিত তাৎক্ষণিক পেমেন্ট সিস্টেম চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। পরিকল্পিত এই ইন্টারঅপারেবল প্ল্যাটফর্মে দেশের সব ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস), ডিজিটাল ব্যাংক এবং ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান যুক্ত হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
সোমবার রাজধানীর গুলশানে আয়োজিত ‘স্টেকহোল্ডার ডিসকাশন অন ইন্টারঅপারেবল পেমেন্টস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক আলোচনায় তিনি এসব তথ্য জানান।
গভর্নর বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর নগদ টাকার ব্যবহার প্রায় ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে। এই প্রবণতা ভাঙতে এবং অর্থনীতিকে আরও স্বচ্ছ করতে এই নতুন পেমেন্ট সিস্টেম চালু করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “আগেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, কাজ হয়নি। তবে এবার প্রমাণিত আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কার্যকর সিস্টেম চালু করতে চাই।”
এই প্রকল্পে গেটস ফাউন্ডেশনের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান গভর্নর। “আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, একটা ইন্টারঅপারেবল ইনস্ট্যান্ট পেমেন্ট সিস্টেম ডেভেলপ করা, যেটার মাধ্যমে যেকোনো ব্যক্তি, যেকোনো স্থান থেকে, যখন ইচ্ছা তখনই পেমেন্ট করতে পারবেন বা বিনিময় করতে পারবেন।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা এই প্রক্রিয়ায় দ্রুত এগোতে চাই। এই পদ্ধতি সফলভাবে চালু হলে দেশের প্রতিটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এক প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হবে এবং নগদহীন অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।”
অনুষ্ঠানে আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, নগদনির্ভরতা দেশের জন্য আর্থিকভাবে ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছর শুধু ব্যাংক খাতকে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা এবং সরকারকে প্রায় ১.৫৩ ট্রিলিয়ন টাকা রাজস্ব হারাতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, ধাপে ধাপে নগদ ব্যবহার কমিয়ে ডিজিটাল লেনদেনের দিকে যেতে হবে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান। এ ছাড়া বক্তব্য দেন ডেপুটি গভর্নর জাকির হোসেন চৌধুরী, গেটস ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি স্নিগ্ধা আলী এবং আইএফএস বাংলাদেশের অন্যান্য কর্মকর্তারা।
আহসান এইচ মনসুর জানান, দেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৬৪ শতাংশ জনগণ আর্থিক ব্যবস্থার আওতায় এলেও ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ মানুষ এখনও বাইরে রয়েছে।
তাঁর মতে, “শুধু আওতা বাড়ানোই যথেষ্ট নয়; বরং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে গভীরভাবে আর্থিক খাতের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছে, যেসব দোকান ব্যবসায়িক লাইসেন্সধারী, তাদের প্রত্যেককে ডিজিটাল কিউআর কোড স্থাপন করতে হবে। এর ফলে নগদ না তুলেই লেনদেনের সুযোগ তৈরি হবে এবং ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবহারে মানুষ উৎসাহিত হবে।
“আমাদের লক্ষ্য হলো সামনে-পেছনে উভয় প্রান্তে নগদ ব্যবহার কমানো। দোকান, রেস্তোরাঁ কিংবা বাজারে ডিজিটাল কিউআর পেমেন্ট প্রচলন করতে চাই,” বলেন গভর্নর।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ক্ষুদ্রঋণ খাত বিশাল হলেও ব্যাংকিং খাতে এর অবদান মাত্র ১০ শতাংশের নিচে। টেকসই করতে হলে এ খাতকে প্রযুক্তিনির্ভর করতে হবে। একইভাবে, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের প্রসার ঘটলেও ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে এখনো চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
গভর্নর জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এজেন্ট ব্যাংকিং সেবায় নিয়োজিত অন্তত ৫০ শতাংশ এজেন্ট নারী হতে হবে। গ্রামীণ পরিবারের নারীরা সহজে গৃহিণী, কন্যা বা শাশুড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। ফলে নারীদের এজেন্ট হিসেবে যুক্ত করলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়বে।
এ ছাড়া, সম্প্রতি কর নীতিতে পরিবর্তন এনে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে বাধ্যতামূলক আয়কর দাখিলের শর্ত বাতিল করা হয়েছে। এতে কার্ড ব্যবহারে গতি আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। পাশাপাশি এমএফএস-এর মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণের সীমা বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে, যা পর্যায়ক্রমে আরও বৃদ্ধি করা হবে।