কানাডায় মেয়ের কাছে দেড় কোটি টাকা পাচার বিএফআইইউর সাবেক প্রধান শাহীনুলের


কানাডায় মেয়ের কাছে দেড় কোটি টাকা পাচার বিএফআইইউর সাবেক প্রধান শাহীনুলের

বিতর্কিত লেনদেন ও ভিডিও কেলেঙ্কারির জেরে সদ্য পদচ্যুত বিএফআইইউ প্রধান এএফএম শাহীনুল ইসলামের বিরুদ্ধে এবার অর্থ পাচারের প্রমাণও উঠে এসেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তিনি কানাডায় মেয়ের কাছে প্রায় ১ কোটি ৮০ হাজার টাকা পাচার করেছেন।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সদ্য বাতিল হওয়া প্রধান এএফএম শাহীনুল ইসলামের বিরুদ্ধে আয়কর ফাঁকি, অর্থ পাচার এবং অঘোষিত সম্পদের মতো গুরুতর অভিযোগ উঠে এসেছে। এনবিআরের আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের অনুসন্ধানে এসব অনিয়মের প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কানাডায় বসবাসরত মেয়ের কাছে একাধিক লেনদেনের মাধ্যমে এই বিপুল অর্থ পাঠানো হয়, যার উল্লেখ তার আয়কর রিটার্নে নেই। একটি বেসরকারি ব্যাংক ব্যবহার করে টাকা পাচারের এই চিত্র ধরা পড়ে তদন্তকারীদের নজরে।

এছাড়া শাহীনুল ইসলামের নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও ক্রেডিট কার্ড রয়েছে, যেখানে অস্বাভাবিক পরিমাণে লেনদেন হয়েছে। বিকাশ ও রকেটের মতো মোবাইল আর্থিক সেবার মাধ্যমেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অর্থ লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

তদন্ত আরও বলছে, অবৈধ সম্পদ গোপনের উদ্দেশ্যে তিনি স্ত্রী সুমা ইসলামের নামে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী ও রমনা এলাকায় ১,১০৫ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। ফ্ল্যাটের দলিলমূল্য আয়কর ফাইলে ৩১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দেখানো হলেও প্রকৃত মূল্য ৭১ লাখ টাকা বা তারও বেশি বলে দাবি তদন্তকারীদের।

স্ত্রী সুমা ইসলামের টিআইএন নম্বর থাকলেও কখনো আয়কর রিটার্ন জমা দেননি। বর্তমানে তারা যে ফ্ল্যাটে বসবাস করছেন, সেটি তার শ্বশুরের নামে, যিনি নিজেও কখনো আয়কর রিটার্ন দাখিল করেননি এবং সম্পদের প্রকৃত মূল্য গোপন রেখেছেন।

এছাড়া শাহীনুল ইসলামের আয়কর ফাইলে ফিক্সড ডিপোজিট (এফডিআর) সম্পর্কিত কোনো তথ্য না থাকলেও, ব্যাংক অনুসন্ধানে একাধিক এফডিআর পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, অবৈধ অর্থ বৈধ হিসেবে দেখানোর জন্যই স্ত্রীর ও শ্বশুরের নামে এই সম্পদ স্থানান্তর করা হয়েছে।

এদিকে, গত ৯ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে শাহীনুল ইসলামের নিয়োগ বাতিল করে দেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্ত আসে তার বিরুদ্ধে ওঠা একাধিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে, যার মধ্যে রয়েছে অবৈধ আর্থিক লেনদেন ও একটি আপত্তিকর ভিডিও কেলেঙ্কারি।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি বিতর্কিত ব্যবসায়ী খন্দকার এনায়েত উল্লাহর ফ্রিজ করা অ্যাকাউন্ট থেকে ১৯ কোটি টাকা উত্তোলনের সুযোগ করে দেন। এছাড়া তার এবং তার স্ত্রীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিকভাবে নগদ অর্থ জমার তথ্যও সেখানে উঠে আসে। ফরেনসিক বিশ্লেষণেও ভিডিওটির সত্যতা নিশ্চিত হয়।

প্রসঙ্গত, তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দেয়, কারণ যথাসময়ে ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তারা ক্ষুব্ধ হন। এরপরই অর্থ মন্ত্রণালয় চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে, যা পরে এসব তথ্য প্রকাশ করে।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×