পিটার হাসের কোম্পানি থেকে সরকার ১ লাখ কোটি টাকার এলএনজি কিনবে


পিটার হাসের কোম্পানি থেকে সরকার ১ লাখ কোটি টাকার এলএনজি কিনবে

বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি আমদানির অংশ হিসেবে মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে বড় পরিসরের এলএনজি সরবরাহ চুক্তি করেছে। এই চুক্তির আওতায় আগামী ১৫ বছরে কোম্পানিটি বাংলাদেশে প্রায় ১ লাখ ৪ হাজার ৫৫০ কোটি টাকার এলএনজি সরবরাহ করবে।

এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বর্তমানে স্ট্র্যাটেজিক অ্যাডভাইজর হিসেবে যুক্ত রয়েছেন। তিনি ২০২২ সালের মার্চে ঢাকায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব নেন এবং ২০২৪ সালের ২৩ জুলাই পদত্যাগ করেন। ওই সময় বাংলাদেশে চলছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং এর কিছুদিন পর, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ করে। ঢাকায় দায়িত্ব পালনকালে মানবাধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়ে সরব ছিলেন পিটার হাস।

পদত্যাগের পর চলতি মাসের শুরুতে পিটার হাস বাংলাদেশে এসে কক্সবাজারের মহেশখালীতে এক্সিলারেটের ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল (এফএসআরইউ) পরিদর্শন করেন। এরপর ৩ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়ামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, যেখানে বাংলাদেশে এলএনজি সরবরাহ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়।

সরকারি সূত্র জানায়, এক্সিলারেটের সঙ্গে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে গত ২০২৩ সালের ২৩ নভেম্বর, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে। চুক্তি অনুযায়ী, কোম্পানিটি আগামী ১৫ বছরে ২৩২টি কার্গোতে ০.৮৫ থেকে ১ মিলিয়ন টন এলএনজি (এমটিপিএ) সরবরাহ করবে। ২০২৬-২৭ সালে ২৮টি কার্গো এবং ২০২৮ থেকে ২০৪০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ১৬টি করে কার্গো আমদানি হবে। গড় বার্ষিক ব্যয় হবে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলার।

রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (আরপিজিসিএল) মহাব্যবস্থাপক (এলএনজি ডিভিশন) প্রকৌশলী মো. শাহ আলম বলেন, “সরকার দেশের গ্যাস সংকট কমাতে এলএনজি আমদানির ওপর জোর দিয়েছে। এরই অংশ হিসেবেই মার্কিন এই কোম্পানির সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করা হয়েছে।”

চুক্তির বাইরে, স্পট মার্কেট থেকেও এক্সিলারেট বাংলাদেশে এলএনজি সরবরাহ করে আসছে। ইতোমধ্যে তারা ১৬টি কার্গো পাঠিয়েছে যার বাজারমূল্য ছিল ৬৩৭ মিলিয়ন ডলার। ভবিষ্যতে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে বছরে ২০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের স্পট কার্গো সরবরাহের সম্ভাবনা রয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, গত জুলাইয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক নিয়ে আলোচনায় দুই দেশ বাণিজ্য ভারসাম্য আনতে আরও বেশি মার্কিন পণ্য কেনার বিষয়ে একমত হয়। এ প্রেক্ষিতে এক্সিলারেটের মতো কোম্পানির মাধ্যমে এলএনজি আমদানির বিষয়টি নিয়ে পররাষ্ট্র সচিব ও পিটার হাসের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।

এ নিয়ে ‘বাংলাদেশ-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা নিরসনে জ্বালানি আমদানি’ শীর্ষক একটি নীতিপত্র তৈরি করেছে সরকার। এতে বলা হয়েছে, আমদানি বৃদ্ধির সবচেয়ে সম্ভাব্য খাত হলো জ্বালানি। বিশেষ করে এলএনজি ও পেট্রোলিয়াম পণ্য (অপরিশোধিত ও পরিশোধিত তেল, এলপিজি ইত্যাদি)।

নীতিপত্রে আরও সুপারিশ করা হয়েছে, ৩.৮ মিলিয়ন টন জ্বালানি তেল আমদানির পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্রের পরিশোধনাগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করতে এবং জিটুজি (সরকার-থেকে-সরকার) ভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি বা টেন্ডারের মাধ্যমে ডিজেল ও অন্যান্য জ্বালানি পণ্য আমদানি করতে। বর্তমানে বছরে মাত্র ০.২ মিলিয়ন টন ডিজেল (মূল্য প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার) যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসে, যা আরও বাড়ানো যেতে পারে। এছাড়া, বাংলাদেশের বাড়তে থাকা এলপিজি চাহিদা মেটাতে মার্কিন সরবরাহকারীদের সঙ্গে এলপিজি কার্গোর জন্য টেন্ডার শুরু করারও সুপারিশ করা হয়েছে।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×