বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র আড়াইহাজার, গুলিবিদ্ধ ৬, আহত ৩০


বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র আড়াইহাজার, গুলিবিদ্ধ ৬, আহত ৩০

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার শনিবার সকালে পরিণত হয় এক রণক্ষেত্রে, যখন স্থানীয় বিএনপির দুটি গ্রুপের মধ্যে তীব্র দফায় দফায় সংঘর্ষ ও গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে। দীর্ঘদিনের ক্ষমতার দ্বন্দ্বের জেরে শুরু হওয়া এ সহিংসতায় ছয়জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।

সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের খালিয়ারচর এলাকায় এই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। দুই পক্ষই দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে, চলে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, গুলি ছোড়া ও ককটেল বিস্ফোরণ। সংঘর্ষের তীব্রতায় পুরো গ্রামজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, নিরাপত্তার জন্য ছোটাছুটি করতে দেখা যায় নারী-শিশুসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

আড়াইহাজার থানার অফিসার ইনচার্জ খন্দকার নাসির উদ্দিন বলেন, “পরিস্থিতি বর্তমানে পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।”

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি কবির হোসেন এবং ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি ফকির জহিরুল ইসলামের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই এলাকায় প্রভাব বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। সম্প্রতি এই উত্তেজনা চরমে ওঠে, যখন কবির হোসেন যুবলীগের সহসভাপতি দেলোয়ার হোসেনের অনুসারীদের বিএনপির দলে যুক্ত করেন। এর জের ধরেই শুক্রবার বিকেলে উভয়পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়, যা শনিবার সকালেই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি যুবদল নেতা জহিরুল ইসলামের চাচা রিপন হত্যা মামলায় ১৭ জনকে আসামি করা হয়। মামলার অভিযুক্তরা জামিন না নিয়েই এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করলে দুই পক্ষ মুখোমুখি হয়। এরপর খালিয়ারচর পশ্চিমপাড়া ফকিরবাড়ি জামে মসজিদের সামনে প্রায় শতাধিক লোক একে অপরের ওপর হামলা চালায়।

ঘটনায় গুরুতর আহত ছয়জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তারা হলেন: খায়ের উদ্দিন (৪২), আব্দুল মতিন (৫০), জোনায়েত মিয়া (২৫), কালু মিয়া (৩৭), খলিলুর রহমান (৪০) ও আল আমিন (২৫)। অন্য আহতদের আড়াইহাজার, সোনারগাঁও, হোমনা ও মেঘনা উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

আহতদের মধ্যে রয়েছেন আরও: রশিদ মিয়া (৫০), মনির হোসেন (৩৫), মজিবুর রহমান (৫০), সালাউদ্দিন মিয়া (৩৫), বিল্লাল হোসেন (৩৫), শুভ মিয়া (২৫), জুনায়েদুর রহমান জুনায়েত (২৫), রাজীব মিয়া (১৫), আহাদ মিয়া (১৮), তামিম মিয়া (১৪), আব্দুর রহিম (৪৫), আলমগীর হোসেন (৪২), স্বপন মিয়া (৪০), আমির আলী (৬০), জমির আলী (৫০), রাফি মিয়া (২৪)।

এ বিষয়ে যুবদল নেতা ফকির জহিরুল ইসলাম বলেন, “হত্যা মামলার আসামিরা জামিন না নিয়েই গ্রামে প্রবেশের চেষ্টা করলে এলাকাবাসী বাধা দেয়। তখনই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।”

অন্যদিকে, বিএনপি নেতা কবির হোসেন তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “কোনো কারণ ছাড়াই জহিরের লোকজন আমাদের ওপর হামলা করেছে।”

পুলিশ জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এলাকায় অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে এবং ঘটনাটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×