বিদেশে ২০০ কোটির বেশি পাচার, চিহ্নিত ১০১ জন: অর্থ উপদেষ্টা


বিদেশে ২০০ কোটির বেশি পাচার, চিহ্নিত ১০১ জন: অর্থ উপদেষ্টা

বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারকারীদের তালিকা প্রস্তুত করেছে সরকার। এ তালিকায় অন্তত ১০১ জন ব্যক্তি রয়েছেন, যারা দেশ থেকে প্রত্যেকে ২০০ কোটি টাকার বেশি পাচার করেছেন বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) অর্থ মন্ত্রণালয়ে সরকারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন তিনি।

তিনি বলেন, “এরকম ১০১টা পেয়েছি। এগুলো এলেইতো হাজার হাজার কোটি টাকা হয়ে যায়।”

পাচার রোধে তিন ধাপের কার্যক্রম
প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী সংবাদ সম্মেলনে অর্থ উপদেষ্টা জানান, অর্থ পাচার রোধে সরকার তিনটি ধাপে কাজ করছে। তিনি বলেন, “১১টি ঘটনা আমরা নির্বাচন করেছি। পাচারকারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। ফেরত আনার জন্য এমওইউ সই হয়েছে।”

তবে তিনি স্পষ্ট করেন, শুধু বাংলাদেশ ব্যাংক বললেই বিদেশি ব্যাংক টাকা ফেরত পাঠাবে না। “লন্ডনে একলোকের কয়েকটা বাড়ি জব্দ করা হয়েছে। সিঙ্গাপুরে আরেকজনেরটা চেষ্টা করা হচ্ছে। বিশ্বের সেরা আইনজীবী তারা নিয়োগ দিয়েছে। ওদেরকে কাউন্টার দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। আইনজীবীদের মাধ্যমে কীভাবে ট্রেস করা যায় সেটার চেষ্টাও চলছে।”

তিনি আরও বলেন, “যারা পাচার করে তাদের বুদ্ধি আমাদের চেয়ে অনেক বেশি। এখান থেকে সেখানে, সেখান থেকে ওখানে—তারা অনেক লেয়ারিং করে। দ্বিতীয়ত, টাকা কোন কোন জায়গায় গিয়ে থেমেছে, সেটা চিহ্নিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত, আনার জন্য একটা আইনি প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হচ্ছে।”

‘আগে কেউ এমন পদক্ষেপ নেয়নি’
অর্থ উপদেষ্টা জানান, পাচারকারীদের বিরুদ্ধে নেওয়া এসব পদক্ষেপ ভবিষ্যতের জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে বিবেচিত হবে। তার ভাষায়, “গত ১৫ বছরে কিন্তু কেউ করেনি। পরবর্তী সরকার যদি মনে করে এগুলো করতে যায় তাহলে ১১ জনের সঙ্গে আরও ১১ জন যোগ হবে। এরকম পদক্ষেপ আগে নেওয়া হয়নি।”

আইএমএফ ঋণের প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে পাওয়া ১.৩ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রসঙ্গ টেনে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “আবার আরেকজন নিয়ে গেল ৪০ হাজার কোটি টাকা। এই টাকাটা না নিলেতো আইএমএফের এই টাকাটা আনা লাগতো না। এগুলো তো আমাদের টাকা।”

তিনি জানান, দেশীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সম্পদও জব্দ করা হয়েছে। “এস আলম, বসুন্ধরা, বেক্সিমকোসহ অনেক কোম্পানির সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। ২০০ কোটি টাকার বেশি যারা নিয়ে গেছে এরকম লোকদের আমরা চিহ্নিত করেছি। এরকম ১০১টা পেয়েছি।”

সহিংস সরকার পতনের চেয়ে বাংলাদেশের অবস্থা ভালো: আনিসুজ্জামান
সংবাদ সম্মেলনে অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, অর্থনৈতিক দিক থেকে বাংলাদেশ সহিংস সরকার পতনের মতো দুর্দশার মুখে পড়েনি।

তিনি বলেন, “যেসব দেশে সহিংসভাবে সরকার পরিবর্তন হয়েছে, যেমন- ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স, ইরান, নিকারাগুয়া, শ্রীলঙ্কা, রাশিয়াসহ সব দেশ। এসব দেশে সরকার পরিবর্তনের পর প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হয়েছে এবং মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়ে গিয়েছিল। পৃথিবীর সব দেশেই মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। প্রবৃদ্ধি কমে যায়। সেই তুলনায় আমাদের এখানে কম হয়েছে।”

তার দাবি, “বাংলাদেশ হচ্ছে বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে মূল্যস্ফীতি কমেছে এবং প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক আছে, নেতিবাচক হয়নি। এটা একটা বিস্ময়কর অর্জন।”

রাশিয়ার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “রাশিয়ায় যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়লো তাদের ঘুরে দাঁড়াতে প্রায় ১০ বছর লেগেছে। তাদের জীবনমান নেতিবাচক হয়েছে। ৯০০ শতাংশের মত মূল্যস্ফীতি হয়েছিল।”

শেয়ারবাজার ও কর্মসংস্থান বিষয়ে মন্তব্য
বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান জানান, গত জুলাইয়ে একটি আন্তর্জাতিক শেয়ারবাজার র‍্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে ছিল। “ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডের পর বাংলাদেশ। ওরা শেয়ারবাজার যেই অবস্থায় রেখে গিয়েছিল সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে।”

কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আইএলও এর নিয়ম অনুযায়ী আমরা কর্মসংস্থানের বিষয়টি বিবেচনা করে থাকি। কিন্তু ইন্টারনেটের যুগে প্রচুর লোক এখন ইন্টারনেটে আয় করে। সেটা আমাদের হিসাবে আসে না। তারা আত্মকর্মসংস্থানে আছে। ঘরে বসে আয় করছে।”

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, অর্থ সচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×