প্রস্তুত পাইপলাইন, তেল পরিবহনে নতুন যুগে ঢুকছে বাংলাদেশ
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৫:২৮ পিএম, ১২ আগস্ট ২০২৫
বাংলাদেশ এখন জ্বালানি তেল সরবরাহে একটি নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইনের মাধ্যমে মাত্র ১২ ঘণ্টায় ৫০ লাখ লিটার তেল ঢাকার বাজারে পৌঁছে যাবে। আগামী ১৬ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে ৩ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকার এই প্রকল্প কার্যক্রম শুরু করবে।
জানা গেছে, প্রি-কমিশনিং, সেন্ট্রাল অটোমেশন, টেলিকমিউনিকেশন ও ফাইন টিউনিংয়ের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে পাইপলাইনে ৩ কোটি লিটার তেল প্রবাহিত করা হয়েছে। এর ফলে পূর্বে শতাধিক কোস্টাল শিপে বহন করা হতো যেসব তেল, এখন অন্তত দেড় দিন সময় বাঁচবে।
প্রথম ধাপে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত ৯টি ট্যাংকে রিফাইনড ডিজেল সরবরাহ করা হবে। সেখান থেকে ডিজেল ডেসপাস টার্মিনালে পৌঁছে, পাম্পিং ব্যবস্থা ব্যবহার করে কুমিল্লার মাধ্যমে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লায় পাঠানো হবে। এই ব্যবস্থা বছরে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা সাশ্রয় করবে।
২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের অর্থায়নে শুরু হওয়া এই প্রকল্প চলতি বছরের মার্চে শেষ হয়েছে। এতে ১৬ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের ২৪২ কিলোমিটার পাইপলাইন পতেঙ্গা থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ পর্যন্ত, এবং ১০ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের আরও ৮ কিলোমিটার সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত স্থাপন করা হয়েছে।
এছাড়া কুমিল্লায় পেট্রোলিয়াম ডিপো নির্মাণ এবং সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লায় রিজার্ভার বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
পেট্রোলিয়াম ট্রান্সমিশন কোম্পানির প্রকল্প পরিচালক মো. আমিনুল হক জানান, পাইপলাইনের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা থেকে বিভিন্ন ডিপোতে তেল সরবরাহ করা সম্ভব হবে এবং চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত তেল পৌঁছাতে মাত্র ১২ ঘণ্টা সময় লাগবে।
পদ্মা অয়েল কোম্পানির তত্ত্বাবধানে এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের বাস্তবায়নে নির্মিত এই প্রকল্পে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। পতেঙ্গার নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসেই পুরো পাইপলাইনের তেল সরবরাহের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে।
বিপিসির কর্মকর্তারা জানান, প্রায় ৯০ কোটি টাকা খরচ সত্ত্বেও বছরে অন্তত ২৩৪ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান বলেন, ‘পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল সরবরাহ মনিটরিং এখন একদম নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসেই করা যাবে।’
দেশের মোট জ্বালানি তেলের প্রায় ৩০ শতাংশ ব্যবহার হয় ঢাকা ও আশপাশের এলাকায়। প্রথম পর্যায়ে বছরে ১৫ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল সরবরাহের লক্ষ্য নেওয়া হলেও ভবিষ্যতে এই পাইপলাইন বাঘাবাড়ি-আশুগঞ্জ ও ভৈরব পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে। এতে সরবরাহ বাড়িয়ে ২১ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।