ব্যাংক মার্জারে সরকার বিনিয়োগ করে লাভসহ ফেরত পাবেন: গভর্নর
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ১০:৫৫ পিএম, ৩১ জুলাই ২০২৫

বিতর্কিত ব্যবসায়ী এস. আলমের ঋণের অনিয়মের কারণে দুর্বল হয়ে পড়া পাঁচটি ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই প্রক্রিয়ায় সরকার অর্থসহায়তা দেবে এবং চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে প্রথম ধাপ সম্পন্ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান।
গভর্নর বলেন, “যেসব ব্যাংক একীভূত হবে, তাদের আমানত সম্পূর্ণ সুরক্ষিত থাকবে। প্রত্যেক আমানতকারী তার টাকা নিশ্চিতভাবে ফেরত পাবেন, কারণ সরকার এই প্রক্রিয়ায় বড় পরিমাণ অর্থ প্রদান করবে।”
তিনি আরও জানান, একীভূতকরণের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর ওপর জনগণের আস্থা বৃদ্ধি পাবে এবং সরকারের বিনিয়োগ লাভজনক প্রমাণিত হয়ে সরকার সেই অর্থ লভ্যাংশসহ ফেরত পাবে। “২০০৮ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের সময় যুক্তরাষ্ট্র সরকার ব্যাংক ও বিমা খাতে বিপুল বিনিয়োগ করেছিল, যা পরবর্তীতে লাভজনক হয়ে বেসরকারি খাতে ফিরে গিয়েছিল। আমাদের ক্ষেত্রেও একই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন,” মন্তব্য করেন তিনি।
গভর্নর জানান, কিছু ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তনের মাধ্যমে তাদের উন্নতির জন্য প্রায় এক বছর সময় দেয়া হয়েছিল। তবে যেসব ব্যাংক পুনরায় সঠিক অবস্থানে আসতে পারেনি, তাদের মার্জার মাধ্যমে শক্তিশালী করা হবে। “দুর্বল ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে দীর্ঘ সময় ধরে রাখতে পারি না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব ব্যাংকিং খাতকে সুসংগঠিত ও দৃঢ় করা,” বলেন আহসান এইচ মনসুর।
তিনি জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বরে প্রথম দফায় কয়েকটি ব্যাংক একীভূত করা হবে এবং পরবর্তীতে আরও ব্যাংক এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবে।
নতুন বিনিয়োগ না বাড়লে রপ্তানি খাতের অবস্থা কী হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান লক্ষ্য মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখা। গতবছরের এই সময় আমদানি প্রায় বন্ধের পর্যায়ে ছিল, এখন পর্যাপ্ত ডলার রয়েছে এবং তা শিল্প খাতের কাঁচামাল আমদানিতে ব্যবহার হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “তৈরি পোশাক শিল্প এখনো শক্তিশালী হলেও দেশের অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা বিনিয়োগে বাধা দিচ্ছে। এজন্য আমরা ডলার সরবরাহ বাড়িয়ে, বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করছি এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম সচল রাখছি।”
গভর্নর আশা প্রকাশ করেন, “নির্বাচনের পর বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেই পরিবেশ তৈরির জন্য কাজ করছে।”
ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অস্থিরতা নিয়ে গভর্নর জানান, “ব্যাংকের অভ্যন্তরে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে, তাদের নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কোনো অনিয়ম ধরা পড়লেই তদন্ত শুরু হয়। বাইরে থেকে চাপ থাকলেও আমরা পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার চেষ্টা করছি। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের সহযোগিতা প্রয়োজন।”
বিদেশে অর্থ পাচারের ব্যাপারে তিনি বলেন, “টাকা পাচারের প্রবণতা অনেক কমে এসেছে। বিদেশে জব্দ অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়, যা অনেক দেশে সময়সাপেক্ষ। আমরা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আইনি সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করছি। প্রক্রিয়া শেষে বহু অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হবে।”