শুল্ক সর্বনিম্ন ১৫ শতাংশের নিচে হবে না, ঢাকায় মঙ্গলবার আলোচনার আসর
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৭:২৬ পিএম, ২৫ জুলাই ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) কার্যালয় অবশেষে বাংলাদেশের সঙ্গে শুল্ক সংক্রান্ত দরকষাকষির তৃতীয় ধাপের বৈঠকের জন্য সময় নির্ধারণ করেছে। আগামী মঙ্গলবার ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঢাকায় সরকারি পর্যায়ে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী ১ আগস্ট থেকে বিভিন্ন দেশের পণ্যে আমদানিতে পাল্টা শুল্ক আরোপ শুরু হবে, যার হার সর্বনিম্ন ১৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত থাকবে। ইতোমধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন কিছু দেশের ওপর আরোপিত অতিরিক্ত শুল্কের হার কমিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, গত বুধবার জাপানের শুল্ক হার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামের শুল্ক হার ২৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে আনা হয়েছে। এই দেশগুলোর ক্ষেত্রে আলাদা চুক্তির মাধ্যমে শুল্ক কমানো হয়েছে, যার লক্ষ্য মার্কিন আমদানি বৃদ্ধি করা।
বাংলাদেশের সঙ্গে এখনও কোনো চুক্তি সই হয়নি। ১ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের পণ্যে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে বাংলাদেশ এই হার কমানোর জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। শুল্ক ছাড় পেতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানি বাড়ানোর জন্য একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এছাড়া সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে জিটুজি পদ্ধতিতে ২২০,০০০ টন গম কেনার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলএনজি আমদানিও বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিমান কেনার প্রস্তাব রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পণ্যে শূন্য বা কম শুল্কের প্রতিশ্রুতিও দেয়া হয়েছে। তবে বাণিজ্যের বাইরের নিরাপত্তা ও ভূ-রাজনৈতিক ইস্যুতে বাংলাদেশ পূর্ববর্তী আলোচনায় সম্মতি দেয়নি।
‘দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করবে এমন সিদ্ধান্ত হবে না’ — বাণিজ্য উপদেষ্টা
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা মার্কিন শুল্ক কমানোর জন্য যথাসম্ভব চেষ্টা করছি। তবে বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে কোনো কাজ হবে না।” তিনি জানান, “আমরা গত পরশুদিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রীকে করণীয় বিষয় নিয়ে একটি চিঠি দিয়েছি এবং এখন তার জবাব ও আমন্ত্রণের অপেক্ষায় আছি।
১ আগস্ট ঘনিয়ে আসায় কোনো দ্রুত ফলাফল আসবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয় আমাদের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও তেমনি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের কার্যক্রমে কোনো স্থবিরতা নেই, যথেষ্ট গতিশীলভাবে আমরা কাজ করছি। আমাদের অবস্থান সঠিকভাবে তুলে ধরেছি এবং ভালো কোনো কিছু আশা করছি।
ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে লবিস্ট নিয়োগের ব্যাপারে তিনি বলেন, এটি ব্যবসায়ীদের ব্যাপার। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো লবিস্ট নিয়োগ করা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র জাতীয়ভাবে শুল্ক আরোপের বিষয়টি জরুরি হিসাবে বিবেচনা করছে, যেখানে লবিস্টদের ভূমিকা কতটা কার্যকর হবে জানি না।
তিনি আরও যোগ করেন, আমাদের অনেক বিষয়ে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন যা অন্য কেউ বুঝতে পারবে না। এসব পরিবর্তনের আইনি প্রক্রিয়া একজন লবিস্টের পক্ষে বোঝা কঠিন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় একযোগে কাজ করছে, রাতদিন ১৫ দিন ধরে প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে।
বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে যুক্তরাষ্ট্রকে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে কি না জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, আমার এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য নেই। বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে কেন কাজ করব? এটি সম্পূর্ণই ভিত্তিহীন প্রশ্ন। স্বার্থ ক্ষুণ্ন করার প্রশ্ন থাকলে এত পরিশ্রমের দরকার কেন?
ট্রাম্পের ঘোষণা: শুল্ক হার সর্বনিম্ন ১৫ শতাংশ
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার ওয়াশিংটনে এক সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, আমাদের একটি সরল ও সহজ শুল্ক ব্যবস্থা থাকবে, যা ১৫ থেকে ৫০ শতাংশের মধ্যে নির্ধারিত হবে। কিছু দেশের ক্ষেত্রে শুল্ক ৫০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে, কারণ তাদের সঙ্গে সঠিক সমঝোতা হয়নি।
ট্রাম্প আরও বলেন, কিছু দেশের জন্য সাধারণ শুল্ক থাকবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনাও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যদি তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসার জন্য দরজা খুলে দেয়, তবে তাদের পণ্যে কম শুল্ক আরোপ করা হবে।