ব্যবসায়িক জীবনের ৪০ বছরে রপ্তানি খাতে এমন সংকট দেখিনি: এ.কে. আজাদ
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৪:৫৩ পিএম, ২০ জুলাই ২০২৫
বাংলাদেশের অন্যতম রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও ব্যবসায়ী নেতা এ. কে. আজাদ জানিয়েছেন, রপ্তানি খাত বর্তমানে এমন এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে, যা তিনি তার চল্লিশ বছরের ব্যবসায়িক জীবনে আগে কখনো দেখেননি।
রোববার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে প্রথম আলো আয়োজিত "যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক: কোন পথে বাংলাদেশ" শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব মন্তব্য করেন তিনি। আলোচনায় অংশ নেন দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও গবেষকেরা।
এ. কে. আজাদ বলেন, “ব্যবসায়ীরা রপ্তানি খাতকে সম্মানজনক অবস্থানে এনেছেন। কিন্তু এখন আমরা হতাশ, ক্ষুব্ধ। ক্রমবর্ধমান শুল্ক চাপ, অনিশ্চিত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং সরকারের পর্যাপ্ত প্রস্তুতির অভাবে আমাদের ভবিষ্যৎ ঝুঁকিতে পড়েছে।”
তিনি জানান, সম্প্রতি এক আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের প্রধান কার্যালয়ে বৈঠকে তাকে জানানো হয়, সংশ্লিষ্ট ব্র্যান্ড তাদের সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের অবস্থান বুঝতে চেয়েছে এবং সেই অবস্থানকে দুর্বল হিসেবে বিবেচনা করেছে। এতে তিনি গভীরভাবে হতাশ হন।
পরিস্থিতির গুরুত্ব উপলব্ধি করে তিনি একাধিক সরকারি উপদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাদের অনেকেই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নেন। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, বাণিজ্য উপদেষ্টা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পরদিনই বৈঠকে বসেন এবং জানান যে সমস্যার ৯৫ শতাংশ ইতোমধ্যে সমাধান করা হয়েছে, বাকি ৫ শতাংশ নিয়ে কাজ চলছে।
এ. কে. আজাদ বলেন, যদি ২–৩ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব কমও আসে, কিন্তু অতিরিক্ত ৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি করা যায়, তাহলে সেটাই দেশের জন্য বেশি লাভজনক হবে।
তিনি আরও বলেন, একজন বিদেশি ক্রেতা তাকে ই-মেইলে জানিয়েছেন, যদি বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ১ তারিখ থেকে কার্যকর হওয়া শুল্ক প্রত্যাহার না করা হয়, তবে অতিরিক্ত ৩৫ শতাংশ শুল্ক তাকে গুণতে হবে। এই চাপ তিনি কীভাবে সামলাবেন, সে প্রশ্নও তোলেন।
প্রতিযোগী দেশের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “ইন্দোনেশিয়ায় আমি একটি যৌথ উদ্যোগে কাজ করছি। সেখানে সরকার ও ব্যবসায়ীরা একসঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করছে। লবিস্ট নিয়োগ দিয়ে তারা বিভিন্ন স্তরে কার্যকরভাবে আলোচনায় যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে এমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।”
তিনি সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন সময় নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “আপনারা বলছেন সাত-আট মাসের জন্য দায়িত্বে আছেন। এরপর চলে যাবেন। কিন্তু তখন আমরা কোথায় যাব? আমাদের ভবিষ্যৎ কোথায় দাঁড়িয়ে থাকবে?”
এ. কে. আজাদের এই বক্তব্য দেশের রপ্তানি খাতের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ব্যবসায়ী সমাজ বলছে, এখন প্রয়োজন সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণে আরও দ্রুততা, সমন্বয় এবং বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ।