ঋণ জালিয়াতিতে নাফিজ সরাফাতসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা


April 2025/nafiz.jpg
চৌধুরী নাফিজ সরাফাত

জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণগ্রহণ এবং ঋণের টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করার অভিযোগে পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত ও আব্দুল মোনেম লিমিটেডের দুই মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রোববার (১৩ এপ্রিল) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে উপসহকারী পরিচালক মুহাম্মদ রাকিব উদ্দিন মিনহাজ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আসামিরা হলেন পদ্মা ব্যাংক পিএলসির সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, ব্যাংকটির এসইভিপি সাব্বির মোহাম্মদ সায়েম, আব্দুল মোনেম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ.এস.এম মঈনউদ্দীন মোনেম ও মিসেস ফারহানা মোনেম।

আসামিরা পদ্মা ব্যাংকের গুলশান কর্পোরেট শাখা থেকে ৫ কোটি টাকার ৬ মাস মেয়াদী ঋণ গ্রহণ করে পরস্পরের যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার ও শর্ত ভঙ্গ করে ঋণের অর্থ ব্যবসার চলতি মূলধনের কাজে না লাগিয়ে অন্য ঋণের দায় পরিশোধ করেছে। পরবর্তী সময়ে ঋণের টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯/৪২০/৫১১ ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭’-এর ৫ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

নাফিজ সরাফাতের বিরুদ্ধে ব্যাংক দখল, ঘুষ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ঋণ জালিয়াতিসহ আর্থিক অনিয়মের অনেক অভিযোগ রয়েছে।

ব্যাংকসহ বিভিন্ন খাত থেকে আত্মসাৎ করা অর্থ পাচার করে তিনি কানাডায় বাড়ি করেছেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটিয়েছেন। বর্তমানে তিনি পলাতক কিংবা দেশের বাইরে রয়েছেন। ২০১৭ সালে পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পর নাফিজ সরাফাত প্রতারণা, জালিয়াতি করে বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকের টাকা হাতিয়ে নেন। যদিও ব্যক্তিগত ও স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে তিনি ২০২৪ সালের ৩১ জানুয়ারি পদত্যাগ করেন। 

দুদকের গোয়েন্দা প্রতিবেদন ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নাফিজ সরাফাত ও তার সহযোগীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও শীর্ষ ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠান গ্রাম-বাংলা ফার্টিলাইজার কোম্পানিকে ৪০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছেন। সাবেক ফারমার্স ব্যাংকের চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে জেসিকা ইন্টারন্যাশনালের অনুকূলে ৬০ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করে ওই টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। ১৫০ কোটি টাকা পদ্মা ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান পদ্মা সিকিউরিটিজের মাধ্যমে নাফিজ সরাফাতের ব্যক্তি নিয়ন্ত্রণাধীন স্ট্র্যাটেজিক ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরিয়ে নেওয়া হয়।

ফ্লোরা সফটওয়‍্যার লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি থেকে ব্যাংকের জন্য সফটওয়্যার কেনার ক্ষেত্রে নাফিজ সরাফাত কোম্পানির কাছ থেকে ৮ কোটি টাকা ঘুষ নেন। একদিনেই কোম্পানির মালিকের চেক ভাঙিয়ে ব্যাংকের ভল্ট থেকে ৫ কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়। পদ্মা ব্যাংকের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান পদ্মা সিকিউরিটিজকে ব্যবহার করে শেয়ারবাজার থেকে ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ রয়েছে। নাফিজ সরাফাত চেয়ারম্যান থাকাকালে ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাতের কারণে পদ্মা ব্যাংক দ্বিতীয়বারের মতো বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। তিনি ৫০০ কোটি টাকার একটি অংশ দিয়ে সাউথইস্ট ব্যাংকের শেয়ার কিনেছেন। কৌশলে তিনি নিজের স্ত্রী, সহযোগীসহ তিনজনকে ব্যাংকের পরিচালক পদে বসান। তিনি সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান হওয়ারও চেষ্টা করেন।

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×