রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাংক লুটের ঘটনা বাংলাদেশেই ঘটেছে: গভর্নর
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৯:২৭ পিএম, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বিশ্বের কোনো দেশে রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে আর্থিক খাতের সর্বনাশ কোথাও হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেছেন, বহির্বিশ্বে দুর্বল ব্যাংক ব্যবস্থাপনা হয়, মূল্যস্ফীতি হয়; কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাংক লুট করার ঘটনা একমাত্র বাংলাদেশেই ঘটেছে।
রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) নীলফামারী সরকারি কলেজে আয়োজিত দেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ রূপরেখা শীর্ষক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
গভর্নর বলেন, শুধু একটি ব্যাংক নয়, সাত সাতটি ব্যাংক লুট করা হয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে এই সাতটি ব্যাংক লুট করে অর্থ পাচার করা হয়েছে বিদেশে। বিশ্বের কোনো দেশে রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে আর্থিক খাতের এত বড় সর্বনাশ কোথাও ঘটেনি।
তিনি আরও বলেন, একটি পরিবারের হাতেই ছিল সাতটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যেটা আইনবহির্ভূত। ইসলামী ব্যাংকের আশি শতাংশের ওপর শেয়ার এস আলম গ্রুপ নামে একটা পরিবারের কাছে। কীভাবে তারা পেল? এটা পুরোপুরিভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রের ব্যর্থতা, বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যর্থতা। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে তাদের সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে।
ব্যাংকগুলোর ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়ে গভর্নর বলেছেন, কিছু ব্যাংক ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক অন্যতম। ঘুরে দাঁড়িয়েছে কারণ ডিপোজিটররা কমিটেড টু দ্য ব্যাংক। তারা জানে ব্যাংকটা ভালো ছিল। এ আস্থা ব্যাংকিং খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ব্যাংকিং খাতের জন্য আস্থাটা দিতে পারলে ঘুরে দাঁড়ানো সহজ।
তিনি আরও বলেন, সবগুলো ব্যাংক আমরা দাঁড় করাব। প্রতিটি ডিপোজিটরের অর্থ আমরা ফেরত দেব—এ গ্যারান্টিটা আমরা দিচ্ছি। তাই ব্যাংকগুলোকে এমনভাবে পুনর্গঠন করব, এমনভাবে ম্যানেজমেন্টে নিয়ে আসব, যাতে শক্তিশালী ব্যাংক হিসেবে তারা দাঁড়িয়ে যেতে পারে।
পাচার হওয়া অর্থ ফেরতে সময় লাগবে উল্লেখ করে গর্ভনর বলেন, পাচার হওয়া কয়েক লাখ কোটি টাকা দেশে ফেরত আনার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমরা অনেক জয়েন্ট ইনভেস্টিগেশন টিম গঠন করেছি। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সরকারি সংস্থা ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। তাদের কাছ থেকে কারিগরি ও আইনি সহায়তাও নিচ্ছি।
কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান। সভায় কলেজের শিক্ষক, ব্যাংক কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
সভা শেষে সন্ধ্যায় নীলফামারী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন গর্ভনর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি ওই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিসি নায়িরুজ্জামান।