বিএসইসির চেয়ারম্যানকে সরিয়ে দেওয়া দরকার: অর্থ উপদেষ্টা


বিএসইসির চেয়ারম্যানকে সরিয়ে দেওয়া দরকার: অর্থ উপদেষ্টা

দেশের শেয়ারবাজারে ক্রমাগত দরপতনের ঘটনা ঘটছে। প্রায় প্রতিনিয়তই কোম্পানির শেয়ারের দর কমতে থাকায় প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বাজারে ক্রমাগত দরপতনের কারণে নতুন বিনিয়োগকারী বাজার আসছে না বরং উল্টো বাজার থেকে বের হয়ে গেছেন। এ অবস্থায় বাজার নিয়ে নিজের অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ। 

তিনি বলেছেন, ‘শেয়ারবাজারে অনেক কোম্পানি বিনিয়োগ করছে। কিন্তু অনেক কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে, তারপরও তাদের দাম বাড়ছে। এগুলো বন্ধ করতে হবে। সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানকে সরিয়ে দেওয়া দরকার।’

রোববার (৬ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সৌদি-বাংলাদেশের বিনিয়োগবিষয়ক একটি প্রতিবেদন প্রকাশনা অনুষ্ঠানে শেয়ারবাজার প্রসঙ্গে সালেহ উদ্দিন এসব কথা বলেন।

এর আগেও বিভিন্ন সময়ে শেয়ারবাজারে দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধির বিষয়ে মন্তব্য করেছিলেন অর্থ উপদেষ্টা। এর ফলে নিয়ন্ত্রক সংস্থায় পরিবর্তনের বড় ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘শেয়ারবাজারে ক্রমাগত দরপতন চলছে। এ অবস্থায় যদি অর্থ উপদেষ্টা এ ধরনের কোন বক্তব্য দিয়ে থাকেন, সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

নানা কারণেই বর্তমান কমিশনের উপর বিনিয়োগকারীরা আস্থা রাখতে পারছেন না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর দেশের শেয়ারবাজারে গতি ফিরতে শুরু করে। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। সূচকেও বড় ধরনের উল্লম্ফন ঘটে। কিন্তু, খন্দকার রাশেদ মাকসুদ চেয়ারম্যান পদে যোগদানের পর থেকে যেন উল্টো পথেই হাঁটতে শুরু করেছে বাজার। গত ১৯ আগস্ট তিনি চেয়ারম্যান পদে যোগ দেওয়ার দিন ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল পাঁচ হাজার ৭৭৫ পয়েন্ট। গতকাল রোববার (৫ জানুয়ারি) সে সূচক কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ১৬৫ পয়েন্টে। এ হিসাবে রাশেদ মাকসুদ চেয়ারম্যান পদে যোগদানের পর ডিএসই সূচকের পতন হয়েছে ৬১০ পয়েন্টের।

ফলে, রাশেদ মাকসুদ কমিশন নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ ও হতাশা কাজ করছে। ইতোমধ্যে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা কয়েক দফা খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগের দাবিতে মিছিল-সমাবেশ করেছেন। এমনকি ঢাকার আগারগাঁয়ে অবস্থিত নিয়ন্ত্রক সংস্থার গেটে তালাও ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন। অবশ্য চেয়ারম্যান হওয়ার পর পুঁজিবাজারে কারসাজির ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে বড় অংকের জরিমানা করেছে রাশেদ কমিশন। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, শেয়ারবাজারের আলোচিত চরিত্র আবুল খায়ের হিরুসহ কারসাজি চক্রের হোতাদের বিরুদ্ধে জরিমানা করার কারণে এক শ্রেণির অসাধু চক্র বাজারকে অস্থির করে তুলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু, তারপরও বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে রাশেদ মাকসুদ কমিশন ব্যর্থ হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগকৃত শিবলী বুবাইয়াত উল ইসলাম গেল ১০ আগস্ট বিএসইসির চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করার পর সাবেক ব্যাংকার খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয় সরকার। অবশ্য প্রথমে পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজকে চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেওয়া হলেও তিনি যোগ দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয় সরকার। তিনি স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। সাবেক ব্যাংকারকে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেওয়ার পর পুঁজিবাজার বিষয়ে তার ‘অনভিজ্ঞতা’ নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×