
জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেন্টারে (জেআইসি) বা আয়নাঘরে সংঘটিত গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক ও বর্তমান সামরিক কর্মকর্তাসহ মোট ১৩ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আজ আদেশ দেওয়ার কথা রয়েছে।
রোববার ১৪ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের বেঞ্চ এ বিষয়ে আদেশ ঘোষণা করবেন।
এই মামলায় প্রসিকিউশন পক্ষ থেকে পাঁচটি অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। অভিযুক্ত ১৩ জনের মধ্যে বর্তমানে তিনজন সেনা কর্মকর্তা গ্রেপ্তার রয়েছেন। গত ৯ নভেম্বর হাজির থাকা আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নিয়ে শুনানি করেন আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু। তিনি চারটি গ্রাউন্ডে অব্যাহতি চেয়ে যুক্তি উপস্থাপন করেন। বেআইনি আটক, অপহরণ ও নির্যাতন এই তিনটি গ্রাউন্ড বিবেচনায় নেওয়ার কথা ট্রাইব্যুনাল জানিয়েছেন। অপর গ্রাউন্ডটি ছিল গুমে রাখা। দুলুর শুনানি শেষে পলাতক আসামিদের পক্ষে আইনজীবী হাসান ইমাম, আমির হোসেনসহ অন্যরা ডিসচার্জ চেয়ে আবেদন করেন। সব শুনানি শেষে অভিযোগ গঠনের আদেশের জন্য আজকের দিন নির্ধারণ করেন আদালত।
সেদিন ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, শাইখ মাহদীসহ আরও কয়েকজন প্রসিকিউটর।
গ্রেপ্তার তিন সেনা কর্মকর্তা হলেন ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী।
শেখ হাসিনাসহ পলাতক অন্য আসামিরা হলেন তাঁর প্রতিরক্ষাবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত তারিক আহমেদ সিদ্দিক, ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত মোহাম্মদ আকবর হোসেন, সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত সাইফুল আবেদিন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত মো. সাইফুল আলম, সাবেক ডিজি লেফটেন্যান্ট জেনারেল তাবরেজ শামস চৌধুরী, সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত হামিদুল হক, মেজর জেনারেল তৌহিদুল ইসলাম, মেজর জেনারেল কবির আহাম্মদ এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত মখসুরুল হক।
এর আগে ৭ ডিসেম্বর অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানিতে অংশ নেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। শুনানিকালে তিনি জেআইসি সেলে সরকারবিরোধী মতাদর্শের ব্যক্তিদের তুলে নিয়ে গুম ও নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন। পাশাপাশি ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত গুম হওয়া ২৬ জনের ঘটনাবলির নির্মমতা আদালতের সামনে উপস্থাপন করেন। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে পাঁচটি অভিযোগ এনে ১৩ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের আবেদন করেন তিনি।
গত ২৩ নভেম্বর পলাতক আসামিদের পক্ষে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল। শেখ হাসিনার পক্ষে স্বেচ্ছায় মামলা পরিচালনার জন্য জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেডআই খান পান্না আইনজীবী হিসেবে নিযুক্ত হলেও শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়ে তিনি ৩ ডিসেম্বর সেই দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। এরপর শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী হিসেবে মো. আমির হোসেনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর আগে ২২ অক্টোবর সেনা হেফাজতে থাকা তিন অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে শুনানি শেষে তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
একইসঙ্গে পলাতক আসামিদের হাজির করতে সাত দিনের মধ্যে দুটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, গত ৮ অক্টোবর প্রসিকিউশন এ মামলায় ১৩ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে। অভিযোগ আমলে নিয়ে ট্রাইব্যুনাল তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করেন।