রামপুরায় হত্যাযজ্ঞ: ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিচ্ছেন গুলিবিদ্ধ ছোট্ট মুসার বাবা
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ১২:১৬ পিএম, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
রাজধানীর রামপুরায় জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানের ঘটনায় দুইজনের মৃত্যু ও এক ব্যক্তিকে গুলিবিদ্ধ করার মামলায়, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণের দ্বিতীয় দিন শুরু হয়েছে।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) সকাল সোয়া ১১টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই মামলা সম্পর্কিত সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরীর একক বেঞ্চ সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করছেন।
দ্বিতীয় সাক্ষী হিসেবে হাজির হয়েছেন গুলিবিদ্ধ বাসিত খান মুসার বাবা মো. মোস্তাফিজুর রহমান। এই ঘটনায় নিহত মায়া ইসলামের ছয় বছরের নাতি মুসা শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও তাকে হুইলচেয়ারে করে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়েছে। শিশুটি এখনও কথা বলতে পারছে না।
প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি চালাচ্ছেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম ও ফারুক আহাম্মদ।
গত ২৩ অক্টোবর মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে। প্রথম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন গুলিবিদ্ধ আমির হোসেন, যাকে পরে পলাতক তিন আসামির পক্ষে স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী মো. আমির হোসেন ও গ্রেপ্তার আসামি চঞ্চল চন্দ্র সরকারের আইনজীবী সারওয়ার জাহান জেরা করেন।
এর আগে, ১৮ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনাল-১ হাবিবুর রহমানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। ওইদিন এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকারের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সারওয়ার জাহান। অভিযোগ শুনে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন চঞ্চল। পলাতক চার আসামির পক্ষে ১৬ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন শুনানি করেন এবং চার আসামির অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন।
আজ সকালেও রামপুরা পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকারকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। হাবিবুর ছাড়া পলাতক অন্য তিন আসামি হলেন খিলগাঁও জোনের সাবেক এডিসি মো. রাশেদুল ইসলাম, রামপুরা থানার সাবেক ওসি মো. মশিউর রহমান এবং রামপুরা থানার সাবেক এসআই তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া। ট্রাইব্যুনাল ১০ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল।
এর আগে, ১ সেপ্টেম্বর পলাতক চার আসামির পক্ষে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল। ২৫ আগস্ট পলাতক আসামিদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়। ৭ আগস্ট প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন। ৩১ জুলাই চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
জানা গেছে, গত ১৯ জুলাই বিকেলে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় রামপুরায় হোটেল থেকে কাজ শেষে ঢাকায় ফুফুর বাসায় ফিরছিলেন আমির হোসেন। বনশ্রী-মেরাদিয়া সড়কে পুলিশের উপস্থিতি দেখে পাশের নির্মাণাধীন চারতলা ভবনের ছাদে উঠেন। পুলিশ তাকে দেখতে পেয়ে ছয়টি গুলি চালায়, যার কারণে তিনি তৃতীয় তলায় পড়ে যান। স্থানীয়রা উদ্ধার করে বনশ্রীর একটি হাসপাতালে নেন এবং রাতেই ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে তিনি বাসায় ফিরেছেন।
একই দিনে পুলিশের গুলিতে রামপুরার বনশ্রী এলাকায় নাদিম ও মায়া ইসলাম নিহত হন। মায়া ইসলামের ছয় বছরের নাতি বাসিত খান মুসাও গুলিবিদ্ধ হন। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন এই শিশু এখনও কথা বলতে পারছেন না।
গত ২৬ জানুয়ারি রাতে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহার নেতৃত্বে ঢাকা মহানগর পুলিশের একটি দল খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে আমির হোসেনকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো সাবেক এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকারকে গ্রেপ্তার করে।