জুলাই গণহত্যা
শেষ সাক্ষীকে আজ জেরা করবেন শেখ হাসিনার আইনজীবী
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৯:৫৪ এম, ০৬ অক্টোবর ২০২৫

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে আজ (সোমবার, ৬ অক্টোবর) জেরা করা হবে মামলার মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরকে। রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন এই জেরা পরিচালনা করবেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর আলমগীর তৃতীয় দিনের মতো সাক্ষ্য দেন শেখ হাসিনাসহ তিনজন আসামির বিরুদ্ধে। তিনি এ মামলার ৫৪তম ও সর্বশেষ সাক্ষী। জবানবন্দিতে তিনি গত বছরের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, গুলি চালানো ও অন্যান্য নৃশংসতার নানা তথ্য উপস্থাপন করেন।
সাক্ষ্যে আলমগীর উল্লেখ করেন, গত বছরের জুলাই আন্দোলনের সময় ৪১টি জেলার ৪৩৮টি স্থানে হত্যাকাণ্ড ঘটে এবং ৫০টিরও বেশি জেলায় মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়। তার জবানবন্দি শেষ হওয়ার পরই ট্রাইব্যুনাল আজকের দিনটি জেরার জন্য নির্ধারণ করে।
সেদিন প্রসিকিউশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, ফারুক আহাম্মদ ও আবদুস সাত্তার পালোয়ান।
এর আগে ২৯ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্যে আলমগীর নিজের জব্দ করা নথি ও ভিডিও উপস্থাপন করেন, যার মধ্যে ছিল জুলাই আন্দোলনের সহিংসতা নিয়ে যমুনা টেলিভিশনের একটি প্রতিবেদন। এছাড়া তিনি জানান, গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর তিন লাখ পাঁচ হাজার গুলি ছোড়া হয়েছিল।
তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়, পাশাপাশি বিবিসি, আল-জাজিরা ও আমার দেশ-এ প্রচারিত প্রামাণ্যচিত্রও ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শন করা হয়।
২৮ সেপ্টেম্বর থেকে আলমগীরের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ওই দিন তার জব্দ করা ১৭টি ভিডিও ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়, যেখানে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের ভয়াবহ চিত্র ফুটে ওঠে।
মোট ২৫ কার্যদিবসে ৫৪ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন এই মামলায়। শেষ সাক্ষীর জেরা শেষ হলেই যুক্তিতর্ক ও রায়ের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
এর আগে ২৪ সেপ্টেম্বর মামলার ২২তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়। সেদিন বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা সাক্ষ্য দেন, যাকে জেরা করেন আমির হোসেন।
এ মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, যিনি ৩৬ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়ে রাজসাক্ষীতে পরিণত হয়েছেন। বিভিন্ন সাক্ষীর জবানবন্দিতে গত বছরের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে দেশজুড়ে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞের বীভৎস বিবরণ উঠে এসেছে, যেখানে শহীদ পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা শেখ হাসিনা, কামালসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউশন তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে।
মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার এই আনুষ্ঠানিক অভিযোগের মধ্যে তথ্যসূত্র ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠা, জব্দতালিকা ও প্রমাণাদি ৪ হাজার ৫ পৃষ্ঠা, এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠা। সাক্ষী হিসেবে তালিকাভুক্ত আছেন ৮১ জন। মামলার তদন্ত প্রতিবেদন গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।