জনগণের আকাঙক্ষার বিপরীতে দাঁড়ালে হিতে বিপরীত হবে: নাহিদ
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৫:১৪ পিএম, ২৮ অক্টোবর ২০২৫
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষায় কেউ যদি এককভাবে সবকিছু করবার চেষ্টা করে এবং জাতীয় ঐক্য ভেঙে জনগণের প্রত্যাশার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়—তাহলে তার ফল হবে উল্টো দিকেই। তিনি এসব কথা বলেছেন মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে রাজশাহী পর্যটন মোটেলে অনুষ্ঠিত ‘সমসাময়িক রাজনৈতিক বিষয়’ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই সনদ বিষয়ে এনসিপির অবস্থান স্পষ্ট এবং সেই দিনেই তারা তাদের অবস্থান ঘোষণা করেছিল— “জুলাই সনদ যেদিন স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হয় সেদিনই আমরা স্পষ্ট করেছি। আমরা বলেছি যে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া কীভাবে হবে, সেইটা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এই স্বাক্ষর অনুষ্ঠান কেবলই একটা আনুষ্ঠানিকতা। কেবলই কাগজে সাইন। যার মূল্য কেবলই কাগজে।”
তিনি উল্লেখ করেন, দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের পর তৈরি ত্রিদলীয় জোটটি জনগণের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণার রূপ নিয়েছিল; সেই পুনরাবৃত্তি কখনো হতে দেয়া হবে না। ফলে তারা সনদ অনুষ্ঠানে স্বাক্ষর করেননি, যদিও স্বাক্ষরে তাঁরা আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
শাপলা প্রতীক নিয়ে নাহিদ বলেন, নির্বাচন কমিশন যদি কোনো যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা না দিয়ে প্রতীক না দেয়, তাহলে সেটা কমিশনের স্বেচ্ছাচারিতার পরিচায়ক হবে এবং এর ফলে জনগণের মনে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। তিনি বলেন,
“শাপলা না দেওয়ার বিষয়টা নির্বাচন কমিশনের একটা স্বেচ্ছাচারিতা। নির্বাচন কমিশন কোনো ধরনের ব্যাখ্যা ছাড়াই মনবাসনা চাপিয়ে দিতে চায়। আমরা ধরে নেব নির্বাচন কমিশন অন্য কোনো শক্তি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন নয়। নির্বাচন কমিশন ন্যায় বিচার করতে সক্ষম নয়। নির্বাচন কমিশন আইন অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে না। গায়ের জোরে পরিচালতি হচ্ছে। ফলে এই ধরনের একটা নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব কিনা সেই বিষয়ে জনগণের মনে প্রশ্ন তৈরি হবে। আমাদের মনেও প্রশ্ন তৈরি হবে। কিন্তু আমরা বলছি- শাপলা নিয়ে আমাদের আইনি ও সাংবিধানিক ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, তাহলে আমরা যে কোনো প্রতীক নিতে প্রস্তুত আছি।”
নাহিদ আরও বলেন, শাপলা আইনি বাধা না থাকলেও রাজনীতির ভাষায় এটি আদায় করতে হয়। কোন পরিকল্পনা করে নির্বাচনে অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্থ করা হলে রাজপথই তাদের একমাত্র বিকল্প হবে—তবে তিনি শাস্ত্রীয়ভাবে নির্বাচন পন্থাকেই অগ্রাধিকার দিতে চান।
জোট নিয়ে তিনি জানান, এখনও এনসিপি কোনো জোটে যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। কোনো জোট হলে তা নীতিভিত্তিক হবে এবং জুলাই সনদ—সংস্কার ইস্যু ভিত্তি করে দেখা হবে কারা দেশের ও জনগণের পক্ষে দাঁড়ান এবং সহযোগিতা করবেন। তিনি বলেন, যদি কেউ সংস্কারের বিরোধিতা করে বা দেশের স্বাধীনতা-আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, তাহলে সেই ধরনের শক্তির সঙ্গে জোট নিয়ে ভাবতে হবে।
আগামী নির্বাচনের টাইমলাইন দ্রুত নির্ধারণে আর্জি জানিয়ে নাহিদ বলেন, ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত যাতে অনিশ্চয়তা তৈরি না হয়। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, “ফ্যাসিবাদী যারা রয়েছে- যারা পতিত শক্তি রয়েছে, তারা নানা ধরনের ষড়যন্ত্র চলমান রেখেছে। নির্বাচনকে ঘিরে তাদের অনেক বড় ষড়যন্ত্র রয়েছে। ক্ষমতার লোভে যদি কোনো দল বা কোনো শক্তি মনে করে তারা এককভাবে সবকিছু করবে, এই জাতীয় ঐক্য ভেঙে দেবে বা জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে দাঁড়াবে তাহলে হিতে বিপরীত হবে। তারা সংসদ টেকাতে পারবে না। সরকার টেকাতে তাদের কষ্ট হবে। জনগণের যে আস্থা সেই আস্থা তারা পাবে না।”