টেকনাফে ২১৮ কোটি টাকার মাদক-চোরাচালান জব্দ, উদ্ধার ৩৮৭ অপহৃত


টেকনাফে ২১৮ কোটি টাকার মাদক-চোরাচালান জব্দ, উদ্ধার ৩৮৭ অপহৃত

টেকনাফে গত এক বছরে ২১৮ কোটি ২৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকার মাদক ও চোরাচালান আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), একই সঙ্গে ৩৮৭ অপহৃত ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন অভিযানে ১৭৯ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এই তথ্য প্রকাশ করেন টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্ট কর্নেল আশিকুর রহমান। সোমবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে ব্যাটালিয়নের ৭৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব বিস্তারিত জানান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিজিবির রামু সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ। এছাড়া ব্যাটালিয়নের অন্যান্য কর্মকর্তা, জুনিয়র কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন পদবীর সৈনিকরা উপস্থিত ছিলেন।

উক্ত অনুষ্ঠানে ব্যাটালিয়নের ইতিহাস ও গত এক বছরের কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হয়। বিজিবি জানায়, ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে ক্রমাগত ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি’ জয় করায় টেকনাফ ব্যাটালিয়ন এক অনন্য রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। ক্রিস্টাল মেথ আইস ও ইয়াবার মতো মারাত্মক মাদকের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই এক অবিস্মরণীয় সাফল্যের সাক্ষ্য বহন করে।

লেফটেন্ট কর্নেল আশিকুর রহমানের বরাতে জানা যায়, ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে ব্যাটালিয়ন ১৭৯ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। একই সময়ে ২.০৮৮০৩ কেজি স্বর্ণ, ৪.২০৬ কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস, ৫৭ লক্ষাধিক ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার এবং দেশি-বিদেশি বিভিন্ন অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে। জব্দকৃত অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে এ-৩ রাইফেল, চারটি এলজি, চারটি বিদেশি পিস্তল, পাঁচটি ওয়ান সুটার গান, আটটি রামদা, আটটি দেশীয় কিরিচ, দুটি একনলা বন্দুক, চারটি চাকু, একটি চাপাতি ও একটি চাইনিজ কুড়াল।

এছাড়া উদ্ধার করা হয়েছে চারটি গ্রেনেড, একটি রকেট বোম্ব, ৬৬৭ রাউন্ড তাজা গুলি, একটি কম্পাস, চারটি ম্যাগাজিন, একটি রকেট লাঞ্চারের গোলা, চারটি খালি ম্যাগাজিন, একটি প্লাস্টিকের ম্যাগাজিন, ৬৯টি হাত বোমা, ২.৯ কেজি বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি, একটি পিস্তলের গুলি, ছয়টি ওয়ান সুটার গানের গুলি এবং দুটি একনলা বন্দুকের গুলি।

ব্যাটালিয়ন মিয়ানমারের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। ৩৪ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা হয়েছে। মানবপাচারের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ৮৭ জন মানবপাচারকারীকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া আরাকান আর্মির কাছ থেকে ১২৪ জন বাংলাদেশিকে উদ্ধার এবং কয়েক কোটি টাকার ১৮টি নৌকা ও বিপুল পরিমাণ জাল ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

মানবিক কার্যক্রমেও ব্যাটালিয়ন সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। গত এক বছরে ৪৪০ জনকে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে, আটটি মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৭ জনকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়েছে এবং প্রান্তিক অঞ্চলের প্রায় এক হাজার অসহায় মানুষকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

লেফটেন্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, “সততা, আনুগত্য, নিষ্ঠা, শৃঙ্খলা-২ বিজিবির প্রতিটি সদস্যের মূল ভিত্তি। সীমান্ত সুরক্ষা, জাতীয় স্বার্থ ও মাদকবিরোধী যুদ্ধ- প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাটালিয়ন হয়ে উঠেছে জাতির গর্ব ও আস্থার প্রতীক।” তিনি আরও বলেন, “বিজিবির ইতিহাসে প্রথম ও একমাত্র ইউনিট হিসেবে অত্যাধুনিক নজরদারি ব্যবস্থা স্থাপন করে ৩০ কিলোমিটার উপকূল এবং ২৩ কিলোমিটার সমুদ্রসীমা নিয়ন্ত্রণ করছে টেকনাফ বিজিবি। সীমান্তে অপরাধ দমনে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।”

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×