চলনবিলের ভাসমান স্কুল পেল ইউনেস্কোর কনফুসিয়াস পুরস্কার
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৩:৪১ পিএম, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
পাবনার চলনবিলে বর্ষাকালে পানির তলায় বিলীন হওয়া গ্রামের শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে রাখার অনন্য উদ্ভাবন এবার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেল। সৌরচালিত ভাসমান স্কুলের জন্য বাংলাদেশের স্থপতি মোহাম্মদ রেজোয়ান ইউনেস্কোর কনফুসিয়াস সাক্ষরতা পুরস্কার-২০২৫ অর্জন করেছেন।
চীনা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় শিক্ষায় নতুন উদ্ভাবন এবং জীবনব্যাপী শিক্ষার প্রসারের জন্য প্রদত্ত এই পুরস্কার বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি। সম্প্রতি রেজোয়ানের প্রতিষ্ঠান সিধুলাই স্ব-নির্ভর সংস্থা একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই খবর নিশ্চিত করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে শত শত মনোনয়নের মধ্যে ইউনেস্কো তিনটি উদ্যোগকে বিজয়ী হিসেবে নির্বাচন করেছে। বাংলাদেশের ভাসমান স্কুলের সঙ্গে অন্য দুটি হলো আয়ারল্যান্ডের লার্ন উইথ নালা ই-লার্নিং এবং মরক্কোর সেকেন্ড চান্স স্কুল অ্যান্ড ইনক্লুসিভ এডুকেশন প্রোগ্রাম।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান ২৭ সেপ্টেম্বর চীনের শানডং প্রদেশের চুফু শহরে কনফুসিয়াসের জন্মস্থান অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে রেজোয়ান তার প্রতিষ্ঠান সিধুলাই স্ব-নির্ভর সংস্থা’র পক্ষে ট্রফি ও সনদ গ্রহণ করেন। ইউনেস্কো এই উদ্যোগকে শিক্ষায় নতুন ধারণা এবং জীবনব্যাপী শিক্ষার প্রসারে বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ সম্মান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ছোটবেলায় রেজোয়ান চলনবিল এলাকায় বড় হয়েছেন। সেখানে প্রতি বছর বন্যার কারণে স্কুল বন্ধ হয়ে যেত। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই ২০০২ সালে তিনি স্থানীয় নৌকাকে স্কুলে রূপান্তর করার অনন্য সমাধান উদ্ভাবন করেন। এটি বিশ্বের প্রথম ভাসমান স্কুল হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে এসব সৌরচালিত নৌকা স্কুল, লাইব্রেরি এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে, যা বর্ষাকালে পানিবেষ্টিত গ্রামগুলোতেও পাঠদান চালিয়ে যেতে সাহায্য করছে। ইউনেস্কো উল্লেখ করেছে, বন্যা প্রবণ অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্থানীয়ভাবে তৈরি উদ্ভাবনীভাবে শিক্ষা পৌঁছে দেওয়াই ভাসমান স্কুলের সাফল্য।
সিধুলাই ভাসমান স্কুলের মডেল এখন দেশের বিভিন্ন এনজিও অনুসরণ করছে এবং এটি এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বহু দেশে একই ধরনের উদ্যোগের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছে। বাংলাদেশ সরকারও ভাসমান স্কুলকে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা ২০৫০-এ অন্তর্ভুক্ত করেছে।
পুরস্কার পাওয়ার পর রেজোয়ান বলেন, ‘শিক্ষা শুধু পড়া-লেখা নয়, এটি শান্তি, সমতা ও সহনশীলতা গড়ে তোলে। আমি আশা করি সাক্ষরতা ও জ্ঞানের শক্তি দিয়ে আমাদের তরুণরা এমন এক ভবিষ্যৎ তৈরি করবে যেখানে কোনো দুর্যোগই কোনো শিশুর শিক্ষাকে থামাতে পারবে না। এক্ষেত্রে উদ্ভাবিত ভাসমান স্কুল সহায়ক ভূমিকা নেবে এমনটাই প্রত্যাশা ব্যক্ত করি।’
ফ্রান্সের ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ইমিগ্রেশনে ‘মাইগ্রেশনস অ্যান্ড ক্লাইমেট এক্সজিবিশন’ এ ‘বোট স্কুলস অব বাংলাদেশ- ফিউচার দ্যাট ফ্লোটস’ শিরোনামে আলোকচিত্র প্রদর্শনী চলছে। এছাড়া সেভ দ্য চিলড্রেন গ্লোবাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫-এর ফাইনালিস্ট হিসেবে টিআরটি ওয়ার্ল্ডের তথ্যচিত্র ‘বাংলাদেশ টার্নস টাইড অন ক্লাইমেট চেঞ্জ উইথ ফ্লোটিং স্কুলস’ নির্বাচিত হয়েছে। চলনবিলের বিশাল জলরাশি থেকে উদ্ভূত এই স্থানীয় উদ্ভাবন এখন বিশ্বব্যাপী শিক্ষার, ডিজাইনের এবং টেকসই ভবিষ্যতের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।