জবি শিক্ষার্থী হত্যাকাণ্ড: অভিযুক্ত মাহিরকে থানায় দিলেন মা


জবি শিক্ষার্থী হত্যাকাণ্ড: অভিযুক্ত মাহিরকে থানায় দিলেন মা

এক মর্মান্তিক ঘটনার মোড় ঘুরে যায় ভোরের আলো ফোটার আগেই, যখন রাজধানীর বংশাল থানায় এক মা নিজেই তার ছেলেকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। তিনি যে ছেলেকে সোপর্দ করলেন, সেই মাহির রহমান অভিযুক্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী মো. জুবায়েদ হোসেন হত্যাকাণ্ডে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (২০ অক্টোবর) ভোরে মাহিরের মা তাকে নিয়ে সরাসরি বংশাল থানায় হাজির হন এবং পুলিশের হাতে তুলে দেন। যদিও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এই ঘটনায় কোনো মামলা রুজু হয়নি।

রবিবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে ঢাকার আরমানিটোলায় টিউশনির সময় খুন হন জুবায়েদ হোসেন। তিনি পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র এবং জবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ রক্তাক্ত অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করে একটি সিঁড়ি থেকে, যেটি ‘রওশন ভিলা’ নামের একটি ভবনে অবস্থিত।

জুবায়েদের পরিবার জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের পেছনে পাঁচজনকে সন্দেহ করা হচ্ছে। নিহতের বড় ভাই এনায়েত হোসেন সৈকত বলেন, ‘আমরা পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করতে চেয়েছি: শিক্ষার্থী বর্ষা, তার বাবা-মা, বর্ষার প্রেমিক মাহির রহমান এবং মাহিরের বন্ধু নাফিসকে। কিন্তু বংশাল থানার ওসি মামলা নিতে রাজি হননি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওসি বলেছেন, এতজনের নাম দেওয়া ঠিক হবে না। বর্ষার বাবা-মায়ের নাম দিলে মামলাটা নাকি হালকা হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা তাদের নাম দিতে চাই। আমরা ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই।’

মামলা গ্রহণে গড়িমসির কারণ হিসেবে শুরুতে জানানো হয়, ওসি রাত ১টা থেকে ৩টার মধ্যে থানায় অনুপস্থিত ছিলেন। পরে তিনি ফিরে এসে অভিযোগে থাকা আসামির সংখ্যা কমাতে বললে মামলার প্রক্রিয়া আরও দীর্ঘ হয়।

বিষয়টি নিয়ে বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তারা যাদের নাম দিতে চান, আমরা সেই নামেই মামলা নেব। শুধু পরামর্শ দিয়েছি যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন।’

পুলিশ জানায়, রবিবার বিকাল ৪টা ৪৫ মিনিটে আরমানিটোলার পানির পাম্প গলির ওই ভবনের সিঁড়িতে জুবায়েদের রক্তাক্ত মরদেহ পাওয়া যায়। ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, দুই তরুণ দ্রুত পালিয়ে যাচ্ছে, যদিও ভিডিওতে তাদের মুখ পরিষ্কারভাবে দেখা যায়নি।

জানা গেছে, জুবায়েদ গত এক বছর ধরে ওই বাড়িতে শিক্ষার্থী বর্ষাকে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানে প্রাইভেট পড়াতেন। ঘটনার পর বর্ষাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেয়। রবিবার রাত ১১টার দিকে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে থানায় আনা হয়।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা বংশাল থানার সামনে অবস্থান নিয়ে দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবি জানায়। তাঁতিবাজার মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন এবং কিছু সময়ের জন্য আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানান।

জুবায়েদের মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শোক প্রকাশ করে দুই দিনের শোক ঘোষণা করেছে। একই সঙ্গে আগামী ২২ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের সব অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×