ভোলার চার আসনে প্রার্থী ঘোষণা করলো ইসলামী আন্দোলন

ভোলার রাজনীতিতে সক্রিয় অবস্থান জানিয়ে চারটি সংসদীয় আসনে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ভোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত এক গণসমাবেশে দলটির আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মাদ রেজাউল করিম এ ঘোষণা দেন।

গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুফতি রেজাউল করিম বলেন, “বিগত ৫৩ বছর পরে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশ গঠনের যে সুযোগ আমরা পেয়েছি, তা কাজে লাগাতে হবে। আর না হয় ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আমরা কী দিয়ে যাব।”

তিনি আরও বলেন, দেশের জনগণ প্রকৃত পরিবর্তন চায়, আর সে জন্য প্রয়োজন প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন ব্যবস্থা বা পিআর পদ্ধতি। তার ভাষায়, “পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ একটা পরিবর্তন চায়। পিআর পদ্ধতি ছাড়া নির্বাচন হলে দেশে ফ্যাসিস্ট তৈরি হবে। কালো টাকার ছড়াছড়ি হবে। চাঁদাবাজ, জুলুমবাজ, নির্যাতনকারী তৈরি হবে। আপনারা আর কত মায়ের বুক খালি করতে চান? পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে আবারও অনেক মায়ের বুক খালি হবে। এজন্য পিআর পদ্ধতি ছাড়া আর কোনো নির্বাচন নয়।”

বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পিআর পদ্ধতির গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, “আপনাদের এত ভয় কেন? পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে এই দেশের জনগণের ভোটের অধিকার ফিরে পাবে। সব ভোটারের মূল্যায়ন হবে। আপনারা চুরি করবেন বলেই পিআর পদ্ধতি মেনে নিতে চান না। পিআর পদ্ধতি মেনে নেওয়া ছাড়া এই জাতি আর কোনো নির্বাচন করতে দেবে না। বাংলাদেশের মাটি ইসলামের ঘাঁটি। আপনাদের চালাকি এ জাতি বুঝে গেছে।”

তিনি উল্লেখ করেন, গত আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হলেও সেই আন্দোলনের মূল দাবিগুলোর এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। তার ভাষায়, “চব্বিশের আন্দোলনে বাংলাদেশ মুক্তির পর এক বছর অতিবাহিত হলেও যেই দাবিতে ফ্যাসিস্টমুক্ত করা হয়েছে তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। যার কারণে ৩ দফা দাবি বাস্তবায়নে জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবশ্যই পিআর পদ্ধতিতে হতে হবে, রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে এবং জুলাই গণহত্যার বিচার করতে হবে। আজ এ দাবিগুলো ৭০ ভাগ ভোটারের।”

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আর পুরনো শাসকগোষ্ঠীর ব্যর্থতা ও দুর্নীতি দেখতে চায় না। “আমরা আওয়ামী লীগের শাসন দেখেছি, বিএনপির শাসন দেখেছি, জাতীয় পার্টির শাসনও দেখেছি। এ দেশের মানুষ আর কোনো আয়না ঘর দেখতে চায় না, নির্বিচারে গুলি করে মানুষ হত্যা, নির্যাতন এবং দেশের টাকা বিদেশে পাচার হোক তাও দেখতে চায় না।”

ভোলা জেলা উত্তর শাখার সভাপতি মাওলানা আতাউর রহমান মোমতাজির সভাপতিত্বে আয়োজিত এই গণসমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, সহকারী মহাসচিব মুফতি এসহাক মুহাম্মদ আবুল খায়ের, বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক উপাধ্যক্ষ মো. সিরাজুল ইসলাম এবং কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য মাওলানা মো. কাজী মামুনুর রশিদ খান। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন ভোলা জেলা উত্তর ও দক্ষিণের সেক্রেটারি মাওলানা তরিকুল ইসলাম ও মাওলানা আব্বাস উদ্দিন।

সমাবেশের শেষাংশে আমির মুফতি রেজাউল করিম ভোলার চারটি সংসদীয় আসনের ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীদের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন। ভোলা-১ আসনে মনোনীত হয়েছেন মাওলানা ওবায়দুর রহমান বিন মোস্তফা, ভোলা-২ আসনে প্রার্থী হিসেবে থাকছেন মুফতি রেজাউল করিম নিজে, ভোলা-৩ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন মুফতি মোসলে উদ্দিন এবং ভোলা-৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন প্রফেসর কামাল উদ্দিন। প্রার্থীদের সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য আলাউদ্দিন তালুকদার এবং ভোলা জেলা দক্ষিণের সভাপতি মুফতি মোহাম্মদ নুরুদ্দিনসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।