নাহিদ ইসলাম
চাঁদাবাজ ও মুজিববাদের নতুন পাহারাদার হয়েছে বিএনপি
- পটুয়াখালী প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ১২:০৭ পিএম, ১৫ জুলাই ২০২৫

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেছেন, এক সময় মুজিববাদকে দায়ী করা দল বিএনপি এখন সেই আদর্শের রক্ষক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবং একটি চাঁদাবাজ গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। তিনি এই নতুন ভূমিকার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
সোমবার দুপুরে পটুয়াখালী শহরের হৃদয় তরুয়া চত্বরে ‘জুলাই পদযাত্রা’র ১৪তম দিনের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। নাহিদ বলেন, “আমরা বিভাজন বা অনৈক্য চাই না, কিন্তু যারা জনগণের বিপক্ষে দাঁড়ায়, তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো ঐক্য হতে পারে না। জুলাই অভ্যুত্থানের বিপক্ষে থাকা কোনো শক্তির সঙ্গে আপস চলবে না।”
তিনি বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থনের মাধ্যমে তরুণ নেতৃত্ব পুরোনো ব্যবস্থার পতন ঘটাতে চেয়েছিল। সেই কারণেই তাদের দমন করতে রাষ্ট্রযন্ত্র এখনও সক্রিয়। অভ্যুত্থানের পর নানা ধরনের ষড়যন্ত্র এবং বিভাজন সৃষ্টি করা হয়েছে আন্দোলনের নেতৃত্বের মধ্যে।”
নাহিদ ইসলাম আরও দাবি করেন, “শেখ হাসিনা সরকারের সময় থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত প্রশাসন ও সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্রের সমর্থনে গঠিত দুর্নীতিগ্রস্ত গোষ্ঠী আমাদের বিরুদ্ধে সক্রিয় রয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে গণআন্দোলনের নেতৃত্বকে রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্ন করা।”
সমাবেশে দক্ষিণাঞ্চলের এনসিপি মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ জানান, ৩ আগস্ট ঢাকার শহীদ মিনারে আবারও বড় জমায়েত হবে। তিনি বলেন, “গত বছর এই দিনে ‘হাসিনা পতনের ইশতেহার’ ঘোষণা করা হয়েছিল, আর এ বছর একই দিনে ‘স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের অঙ্গীকার’ করা হবে।”
উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, “জুলাই আমাদের কাছে প্রতিজ্ঞার মাস। আমরা যেন শহীদদের আত্মত্যাগ ভুলে না যাই তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে হবে।”
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সদস্য সচিব নাহিদা সরোয়ার নিভা, মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন, জহিরুল ইসলাম মুছা প্রমুখ। এর আগে এনসিপির নেতাকর্মীরা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা প্রদক্ষিণ করে সমাবেশস্থলে একত্রিত হন এবং পরে শহীদ হৃদয় তরুয়ার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
বরগুনায় পথসভা ও অভিযোগ
সন্ধ্যায় বরগুনা শহরে আরেকটি পথসভায় নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন, একটি রাজনৈতিক দল সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজিকে রক্ষা করছে। তিনি বলেন, “ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় বরগুনার সন্তান সোহাগকে প্রকাশ্যে পাথর দিয়ে হত্যা করা হয়েছে, যা এই দস্যুবৃত্তির প্রকৃষ্ট উদাহরণ।” তিনি বলেন, এই নির্মমতা ও প্রশাসনের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে দেশবাসীকে প্রতিবাদ জানাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, “আমরা বরগুনার মৎস্য ও কৃষি সমস্যার টেকসই সমাধান চাই। পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন ছাড়া বাংলাদেশে প্রকৃত পরিবর্তন সম্ভব নয়। যারা একসময় পাকিস্তানপন্থীদের পুনর্বাসন করেছিল, এখন তারা মুজিববাদ পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে। আমরা তা হতে দেব না।” এ সময় কর্মীরা স্লোগান দেন “চাঁদাবাজ আর দখলদার, মুজিববাদের পাহারাদার।
চরমোনাইয়ে এনসিপি নেতারা
অন্যদিকে, সোমবার রাতে এনসিপির শীর্ষ নেতারা বরিশালের চরমোনাই পীরের বাসভবনে যান এবং সেখানে রাতের খাবার খান। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম তাদের স্বাগত জানান এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় করেন।
এনসিপি সূত্র জানায়, এই সাক্ষাৎ দক্ষিণাঞ্চলে রাজনৈতিক সমন্বয়ের অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা আগামী আন্দোলনে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।