ভাড়া চাওয়ায় রিকশাচালককে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠালেন বিএনপি নেতা


ভাড়া চাওয়ায় রিকশাচালককে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠালেন বিএনপি নেতা

ফরিদপুরে একটি রিকশাভাড়া ঘিরে ঘটে গেছে চাঞ্চল্যকর একটি ঘটনা। অভিযোগ উঠেছে, বকেয়া ভাড়ার প্রতিবাদ করায় এক রিকশাচালককে তুলে নিয়ে মারধর করেছে স্থানীয় এক বিএনপি নেতার ছেলে। বর্তমানে নির্যাতনের শিকার ওই চালক হাসান প্রামাণিক চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে রয়েছেন।

ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার, ১৫ অক্টোবর সকাল ১০টার দিকে ফরিদপুর শহরের আদমপুর এলাকায়। ভুক্তভোগী হাসান প্রামাণিক (২৭) ফরিদপুর পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এবং ইউসুফ প্রামাণিকের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালিয়ে পরিবারের খরচ চালিয়ে আসছেন।

হাসানের অভিযোগ, স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহমান শেখ প্রায়ই তার রিকশায় উঠলেও ভাড়া না দিয়েই নেমে যান। বুধবার সকালে আব্দুর রহমান আবার রিকশা ধরতে চাইলে হাসান তাকে ভাড়া না দেওয়ার বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়ে নিতে অস্বীকৃতি জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আব্দুর রহমানের ছেলে রফিকুল ইসলাম (২৫) কয়েকজন সহযোগী নিয়ে হাসানকে জোর করে একটি ফটোস্ট্যাট দোকানে নিয়ে যায় এবং পেছনের একটি কক্ষে আটকে কাঠের লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করে।

হাসান বলেন, "আব্দুর রহমান মাঝে মাঝে আমার রিকশায় উঠে কিন্তু ভাড়া দেয় না। গতকাল উঠতে চাইলে আমি বলি আপনিতো ভাড়া দেন না। একথা পাশে থেকে তার ছেলে শুনে। এর এক ঘণ্টা পরে দুজন লোক মোটরসাইকেলে এসে বলে তোকে রফিকের দোকানে যেতে হবে, তখন আব্দুর রহমান এসে জোড় করে গাড়িতে উঠিয়ে দেয়। এরপর দোকান বন্ধ করে আমারে কাঠের বাটাম দিয়ে মারতে থাকে। তার পা জড়ায় ধরলেও মারতে থাকে।"

চিৎকার শুনে স্থানীয়রা ছুটে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার বিকালে হাসপাতালের পুরুষ সার্জারি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, হাসান গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার হাত, পা এবং পিঠে নির্যাতনের স্পষ্ট চিহ্ন দেখা গেছে। পাশে বসে থাকা তার মা নিলুফা বেগম এবং বাবা ইউসুফ প্রামাণিক চোখের জলে তার অবস্থার বর্ণনা দিচ্ছিলেন।

হাসানের বাবা জানান, "আমরা অসহায় মানুষ। আমার অসুস্থ ছেলেকে বিনা কারণে তুলে নিয়ে মারধর করেছে। ওর একটি কিডনি নাই, দেখেন কিভাবে মারছে। আমি কঠিন বিচার চাই।"

তিনি আরও জানান, ২০ বছর আগে পদ্মা নদীর ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে তারা আদমপুরে এক আত্মীয়ের জমিতে বসতঘর তুলে বসবাস শুরু করেন। তাদের তিন ছেলের মধ্যে হাসান মেজো এবং ছোট ছেলে মানসিকভাবে অসুস্থ। তিন বছর আগে হাসানের একটি কিডনি অকেজো হয়ে গেলে ভারতে নিয়ে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সেটি অপসারণ করতে হয়। চিকিৎসা খরচের চাপ সামলাতে না পেরে পরে হাসান রিকশা চালানো শুরু করেন।

এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা সিদ্দিক প্রামাণিক বলেন, "আব্দুর রহমান আগে আওয়ামী লীগ করত, এখন বিএনপির নেতা সেজেছে। তার ছেলেও ছাত্রলীগ ও হেলমেট বাহিনীর সদস্য ছিল। এলাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। একজন ভদ্র ও নিরীহ ছেলেকে নির্যাতন করেছে, আমি এ ঘটনার সঠিক বিচার চাই।"

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা আব্দুর রহমান বলেন, "আমাকে একটি খারাপ কথা বলায় আমার ছেলে রাগে ও ভুলে ঘটনাটি ঘটিয়েছে। আমি নিজে চিকিৎসার জন্য খরচ দিয়ে এসেছি।"

এদিকে, ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় হাসানের বাবা বুধবার রাতে লিখিত অভিযোগ করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক নূর হোসেন। তিনি জানান, "ঘটনাটি নিয়ে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। তবে তুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। ওই ছেলেটা নিজেই ওই দোকানে গিয়েছিল। এরপর দোকানের ভেতরে নিয়ে মারধর করেছে।"

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×