দুইদিনব্যাপী নানা আয়োজন

গৌরব আর অহংকারের পাবনা প্রেসক্লাবের ৬৪ বছর পূর্তি ১ মে


MARCH NAEEM 2ND/Pabna Press Club Pic-01.jpg

মহানয়িকা সুচিত্রা সেন, উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত গীতিকার গৌরি প্রসন্ন মজুমদার, সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরী, ওস্তাদ বারীন মজুমদার, কবি বন্দে আলী মিয়া, অধ্যাপক মনসুর উদ্দিন আহমেদসহ অসংখ্য গুনি সাংষ্কৃতিক ও সাহিত্যিকের জন্মভুমি পাবনা। ব্রিটিশ পরবর্তি শাসনামলপুর্ব এ অঞ্চলে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক বিকাশ ঘটে। তারই ধারবাহিকতায় প্রতিষ্ঠা হয়েছিল পাবনা প্রেসক্লাব।

তাই এ অঞ্চলের সাংবাদিকতার গৌরব ও অহংকারের নাম পাবনা প্রেসক্লাব। ১ মে পাবনা প্রেসক্লাব ৬৪ বছর পূর্ণ করে ৬৫ বছরে পা রাখছে। ১৯৬১ সালের এই দিনে পাবনা শহরে পাবনা প্রেসক্লাবের গোড়াপত্তন ঘটে। সেই থেকে অনেক স্মৃতি, নানা ইতিহাস ও গৌরবময় ঘটনার সঙ্গে পাবনা প্রেসক্লাবের নাম জড়িয়ে রয়েছে। সারা দেশে সাংবাদিকদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য ও সাংবাদিকদের একাধিক প্রতিষ্ঠান থাকলেও পাবনা প্রেসক্লাব সে ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। এই প্রতিষ্ঠান এখনও দেশের মধ্যে অখন্ড এবং ঐক্য’র অন্যন্য নজির হিসেবে দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে।

পদ্মা যমুনা বিধৌত এবং ইছামতি নদী তীরে গড়ে উঠা পাবনার জনপদে সাংবাদিকতার সুত্রপাত ঘটে উনিশ শতকের প্রথম দিকে। এ অঞ্চলের বিরাজমান সমস্যা সমাধানে দিক নির্দেশনায়, সৎ বস্তুনিষ্ট ও বলিষ্ঠ লেখনির মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে এবং অসহায় নির্যাতিত মানুষের চালচিত্র নি:শঙ্কভাবে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরার ব্রত নিয়ে সাংবাদিকগণ ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। সাংবাদিকতায় লালিত এই ঐতিহ্যের ধারায় বিশ শতকের ষাটের দশকের শুরুতে তৃনমূল পর্যায়ের সাংবাদিকতা পেশার স্বীকৃতির দাবীকে সামনে রেখে ১৯৬১ সালের ১ মে পাবনা শহরে স্থাপিত হয় পাবনা প্রেসক্লাব।

তৎকালীন দৈনিক আজাদ ও অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস অব পাকিস্তান (এপিপি) এর পাবনা প্রতিনিধি একেএম আজিজুল হক বিএসসি ক্যাল এর সভাপতিত্বে তার বাসা সানভিউ ভিলায় অনুষ্ঠিত সভায় তিনিই (একেএম আজিজুল হক) পাবনা প্রেসক্লাবের প্রথম সভাপতি এবং সংবাদ প্রতিনিধি রণেশ মৈত্র সাধারণ সম্পাদক নির্বাচত হন। এছাড়া দৈনিক ইত্তেফাকের পাবনা প্রতিনিধি এম আনোয়ারুল হক, বিশিষ্ট চিকিৎসক মেজর (অব.) ডা. মোফাজ্জল হোসেন, লোক শিক্ষক শহীদ মাওলানা কছিমুদ্দিন আহমেদ, ফটোগ্রাফার হিমাংশু কুমার বিশ্বাস প্রমুখ অন্যতম প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ছিলেন। বর্তমানে পাবনা প্রেসক্লাবের সদস্য সংখ্যা ৬৫।

সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মাশাল (অব.) একে খন্দকার, স্কয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রয়াত স্যামসন এইচ চৌধুরী, প্রয়াত ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন এই প্রেসক্লাবের সম্মানিত জীবন সদস্য ছিলেন ও রয়েছেন। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন পাবনা প্রেসক্লাবের আজীবন ও ২২তম সদস্য। মাছরাঙা টেলিভিশন ও স্কয়ার টয়লেট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু পাবনা প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য রয়েছেন।

প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠার বছরেই ৮ ও ৯ মে পাবনায় অনুষ্ঠিত হয় পুর্ব পাকিস্তান মফস্বল সাংবাদিক সম্মেলন। যে সভা থেকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ পায় পুর্ব পাকিস্তান মফস্বল সাংবাদিক সমিতি। যা বর্তমানে বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি হিসেবে পরিচিত। সেই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন মন্ত্রীসভার সদস্য বগুড়ার মো: হাবিবুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পাকিস্তান অবজারভারের সম্পাদক আব্দুস সালাম, মর্নিং নিউজের এসজিএম বদরুদ্দিন। যে সম্মেলনের মাধ্যমে মফস্বল সাংবাদিকরা পেশার স্বীকৃতি তথা রিটেইনার, লাইনেজ, পোষ্টাল চার্জ, টেলিগ্রাম চার্জ, ছবির বিলসহ অন্যান্য খরচ পাওয়া শুরু করেন।

পাবনা প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়েই সেদিন সংবাদপত্রে মফস্বলে কর্মরত প্রতিনিধিদের পেশার স্বীকৃতি ঘটেছিল। এখন ঢাকার বাইরে অনেকে এটাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে স্বচ্ছল জীবন যাপন করছেন। তাই অনেক প্রবীণ সাংবাদিক পাবনা প্রেসক্লাবকে মফস্বল সাংবাদিকতার বাতিঘর হিসেবে চিহিৃত করেছেন।

পাবনা প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠার পর একেএম আজিজুল হক পাবনা প্রেসক্লাবের প্রথম সভাপতি এবং সংবাদ প্রতিনিধি রণেশ মৈত্র প্রথম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তিতে এম আনোয়ারুল হক, মির্জা শামসুল ইসলাম, প্রফেসর আব্দুস সাত্তার বাসু, অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু, রবিউল ইসলাম রবি, অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ মহিউদ্দিন, প্রফেসর শিবজিত নাগ, আব্দুল মতীন খান, এবিএম ফজলুর রহমান, রুমী খন্দকার, উৎপল মির্জা, আহমেদ উল হক রানা, আঁখিনুর ইসলাম রেমন বিভিন্ন সময় এক বা একাধিকবার সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমান সভাপতি আখতারুজ্জামান আখতার ও সম্পাদক হলেন জহুরুল ইসলাম।

দীর্ঘ ৬৪ বছর জেলায় কর্মরত সাংবাদিকেরা একই ছাদের তলায় আছেন। মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের বিভিন্ন আন্দোলন–সংগ্রামে এই ক্লাবের সদস্যদের রয়েছে অনন্য ভূমিকা। পাবনা প্রেসক্লাবের ৯ জন সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা। ৩ জন সদস্য একুশে পদকপ্রাপ্ত।

পাবনা প্রেসক্লাবের অতীত ঐতিহ্য ও বিশাল ইতিহাস থাকলেও আজও পাবনা প্রেসক্লাবের নিজস্ব ভবন হয়নি। পরিত্যক্ত সম্পত্তির উপর গড়ে উঠা এই ক্লাবটির শরীরে শীর্ণতা থাকলেও মর্যাদা ও আভিজত্যে এখনো অটুট। সম্প্রতি ঐ পরিত্যক্ত ভবনেই একটি অত্যাধুনিক অফিস কক্ষ, ভিআইপি মিলনায়তন, সাধারণ মিলনায়তন এবং লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

এদিকে, ১ মে পাবনা প্রেসক্লাবের ৬৪ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে দুইদিনব্যাপী নানা কর্মূসচী হাতে নেওয়া হয়েছে। ৩০ এপ্রিল বুধবার প্রেসক্লাব আলোকসজ্জাকরণ করা হয়েছে। ১ মে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় আনন্দ র‌্যালী, আলোচনা সভা, সম্মাননা ক্রেস্ট বিতরণ ও কেক কাটার আয়োজন করা হয়েছে। আর পরদিন ২ মে শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে পাবনা প্রেসক্লাবকে সাজানো হয়েছে নতুন সাজে।

এ বিষয়ে পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি আখতারুজ্জামান আখতার বলেন, ‘পাবনা প্রেসক্লাব আমাদের ঐতিহ্য, গৌরব আর অহংকারের। সারাদেশের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী পুরোনো প্রেসক্লাবের মধ্যে পাবনা প্রেসক্লাব অন্যতম। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ সহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের স্বাক্ষী এই প্রেসক্লাব। সকল বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে এখানকার সাংবাদিকদের ঐক্য আদর্শ আজও অটুট রয়েছে। আগামীতেও বহমান থাকবে বলে বিশ্বাস করি। পাবনা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর  আনন্দ পাবনাবাসীর।’

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×