রায়পুরের বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ-হত্যার ঘটনায় মামলা, ১৫ নেতাকর্মী বহিষ্কার


April 2025/Raipur Thana.jpg

লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশীতে বিএনপি দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে বিএনপি কর্মী ও স্পেন প্রবাসী সাইজ উদ্দিন নিহতের ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে। বুধবার (৯ এপ্রিল) দিবাগত রাতে তার বড় ভাই হানিফ দেওয়ান বাদী হয়ে রায়পুর থানায় মামলাটি করেন। মামলায় উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি ফারুক কবিরাজকে প্রধান আসামি করে তার ছোট ভাই মেহেদী কবিরাজসহ ২৬ জনের নাম উল্লেখ করে ১৬০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কাউকে গ্রেপ্তারের তথ্য পাওয়া যায়নি।

সহকারী পুলিশ সুপার (রায়পুর-সার্কেল) জামিলুল হক জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকাটিতে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।

এদিকে ঘটনার সাথে জড়িত থাকায় বিএনপির ১৫ নেতাকর্মীকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। একইসাথে উপজেলা কৃষকদলের সদস্য সচিব জিএম শামীমকেও বহিষ্কারের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

বুধবার রাতে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেডএম নাজমুল ইসলাম মিঠু, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সালেহ আহম্মদ ও সদস্য সচিব সফিকুর রহমান ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেডএম নাজমুল ইসলাম মিঠু।

তিনি জানান, এদিন উপজেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষকদল, তাঁতীদলসহ সকল সহযোগী সংগঠনের যৌথ সভায় আজীবন বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়। সেই সাথে গত ৭ এপ্রিল হামলা, সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও হত্যার ঘটনায় জড়িত এসব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়।

বহিষ্কৃতরা হলেন উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি কর্মী মেহেদী কবিরাজ, ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি এবাদ উল্যা গাজী, ইউনিয়ন বিএনপির নেতা ফারুক সর্দার ওরফে ফারুক কবিরাজ, ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সফিক রাড়ী, ৮ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আরিফ, ৭ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দল কর্মী ফারুক গাজী ও রায়হান, ৬ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দল কর্মী আল আমিন কবিরাজ, ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মানিক আহমেদ তারেক, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ওমর আলী হাওলাদার, ৬ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী নজরুল ইসলাম, ইউনিয়ন যুবদল কর্মী শরিফ বাগ, শাহজাহান মাঝি ও ইউনিয়ন কৃষকদলের সদস্য সচিব শাহ আলী।

বহিষ্কার আদেশে বহিষ্কৃতদের সাথে কোন প্রকার সম্পর্ক, উঠাবসা না করার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের অনুরোধ করা হয়। অমান্যকারীদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের হুশিয়ারি দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, গত সোমবার (৭ এপ্রিল) বিকেলে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতা ফারুক কবিরাজ ও কৃষকদল নেতা জিএম শামীম গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় বিএনপি কর্মী স্পেন প্রবাসী সাইজ উদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আহত হয় দু'পক্ষের অন্তত ১৫ জন। নিহত সাইজ উদ্দিন কৃষকদল নেতা শামীমের অনুসারী ছিলেন। এ ঘটনার জের ধরে ওই এলাকার তিনজনের বাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ ১৫ বাড়িতে হামলা-ভাংচুর চালানো হয়।

জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পর মেঘনার চর, মাছঘাট, বাজার ও কাঁচামালের আড়ত নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একপক্ষ উপজেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব জিএম শামীম গাজী ও অন্যপক্ষ ইউনিয়ন বিএনপির নেতা ফারুক কবিরাজ। এগুলো নিয়ন্ত্রণের জেরে গত ১৯ ডিসেম্বর রাতে ও পর দিন ২০ ডিসেম্বর সকালে উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের খাসেরহাট বাজার ও বাবুরহাট বাজার এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়। ভাংচুর করা হয় বাড়িঘর ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। তখনকার ঘটনায় উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, তাঁতীদল, ছাত্রদল ও সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে দলীয় কার্যক্রম স্থগিত করার নির্দেশ দেয়। এরপরেও তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। সর্বশেষ গত সোমবার সংঘর্ষে একজন খুন হয়।

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×