লক্ষ্মীপুরে আলোচিত মা-মেয়ে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন, মূলহোতা গ্রেপ্তার


লক্ষ্মীপুরে আলোচিত মা-মেয়ে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন, মূলহোতা গ্রেপ্তার

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে আলোচিত জোড়া খুন মা-মেয়েকে জবাই করে হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। হত্যাকান্ডের ৯ দিনের মাথায় এই জোড়া খুনের রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয় তারা। হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত মূলহোতা নিহত মীম-এর ফুফাতো ভাই পারভেজকে লুন্ঠিত স্বর্ণালঙ্কারসহ ঢাকা তুরাগ থানাধীন মনিরের গ্যারেজ থেকে বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১ টার সময় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। 

গ্রেপ্তার পারভেজ হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন জেলা পুলিশ সুপার মো. আকতার হোসেন। 

এর আগে গত ৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে ক্রোকারিজ ব্যবসায়ীর স্ত্রী ও কলেজপড়ুয়া মেয়েকে জবাই করে হত্যা করা হয়। উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের পশ্চিম শ্রীরামপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ঘরে থাকা স্বর্ণালংকার লুট করে নেওয়া হয়।

নিহতরা হলেন জুলেখা বেগম (৫৫) ও তার মেয়ে কলেজছাত্রী তানহা মীম (১৯)। জুলেখা রামগঞ্জের সোনাপুর বাজারের ক্রোকারিজ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমানের স্ত্রী ও মীম তাদের সন্তান। মীম রামগঞ্জ মডেল কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। 

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, রামগঞ্জ থানায় মা ও মেয়ে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত মূলহোতা পারভেজ মীম-এর ফুফাতো ভাই। পারভেজ দুইমাস আগে সৌদি আরব থেকে লক্ষ্মীপুরে আসে। গত দুইমাস যাবৎ প্রচন্ড টাকার অভাবে ছিল তার। একদিকে এনজিও থেকে নেওয়া লোনের কিস্তি অন্যদিকে ব্যাংকে রাখা নিজের টাকা তুলতে পারছিল না সে। অভাবের তাড়নায় সে মামার বাসা রামগঞ্জ থেকে স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে আসার চিন্তা ভাবনা করে। গত ৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রামগঞ্জ থেকে একটি চাকু কিনে দুপুর তিনটা থেকে সোয়া তিনটার সময় সে মামার বাড়িতে প্রবেশ করে। প্রথমে মামী ও মামাতো বোন মীম তাকে আমড়া ও আপেল খেতে দেয়। তারপর সে মীমের সাথে বাসার দ্বিতীয় তলায় যায়। মীম তার সাথে থাকা চাকু দেখে চিৎকার দিলে তার সাথে মীমের ধস্তাধস্তি হয়। মীম মামাকে বলে দিতে পারে এই ভয়ে পারভেজ তার শরীরের বিভিন্ন অংশ ও গলায় চাকু দিয়ে অনেকগুলো আঘাত করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। ঐ সময় মামী নিচে ছিল। মামী কানে কম শুনত। মামীকে নিচে এসে সে বলে, মীম আপনাকে দ্বিতীয় তলায় ডাকে। মামী উপরে গেলে পিছনে থেকে প্লেট নিয়ে তার মাথায় আঘাত করে। মামী পড়ে গেলে টি-টেবিল দিয়ে আবার আঘাত করে। মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য ঘাড়ে ও গলায় চাকু দিয়ে আঘাত করে। তারপর রুমে থাকা শাবল দিয়ে আলমারী খুলে। আলমারীতে থাকা স্বর্ণালঙ্কার ব্যাগে নেয় এবং শাবল, চাকু, আপেল, আমড়া পুকুরে ফেলে দিয়ে বেরিয়ে আসে। আসার পূর্বে পারভেজ জামা ও প্যান্ট খুলে ব্যাগে নেয় এবং মামাতো ভাইয়ের প্যান্ট ও গেঞ্জি পরে বের হয়। পরে রামগঞ্জের একটি খালে জামার ব্যাগটি ফেলে দেয়। পারভেজ মামার বাসা হতে বের হওয়ার ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর মাগরিবের আযান হয়। পরে সে সরাসরি লক্ষ্মীপুরে তার শ্বশুর বাড়িতে চলে আসে। পারভেজ মামাতো ভাইয়ের গেঞ্জি তার শ্বশুর বাড়ির খাটের নিচে রাখে এবং প্যান্টটি বাহিরে নিয়ে গিয়ে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে লক্ষ্মীপুরের দুটি দোকানে অনুমানিক ১ ভরি স্বর্ণ বিক্রিয় করে। বাকি স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে ঢাকায় গেলে সেখানে অনুমানিক ৬ ভরি স্বর্ণালঙ্কারসহ লক্ষ্মীপুর জেলার ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়।

তিনি আরও বলেন, হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হবার পর থেকে রামগঞ্জ থানা পুলিশ তদন্ত শুরু করে ও ডিবি'র একটি টিম পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে তদন্ত কাজে সহায়তা করে। নিবিড় তদারকীর মাধ্যমে তদন্তকালে বিভিন্ন ব্যক্তির বক্তব্য, পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য, প্রযুক্তিগত প্রমাণ ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে মামলার রহস্য উদঘাটনসহ আসামী গ্রেপ্তারে সক্ষম হয় পুলিশ। 

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×