‘বিশেষ বিবেচনায়’ হলে থাকেন শিবির সভাপতি, হয়েছেন ভিপি প্রার্থী


‘বিশেষ বিবেচনায়’ হলে থাকেন শিবির সভাপতি, হয়েছেন ভিপি প্রার্থী

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে আসন বরাদ্দে নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে শিবির সমর্থিত ভিপি প্রার্থী নিয়ামত উল্লাহর বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত মানদণ্ড অনুযায়ী ন্যূনতম ২.৯২ সিজিপিএ না থাকলে হলে থাকার সুযোগ নেই। অথচ মাত্র ২.৬৫ সিজিপিএ পেয়েও সোহরাওয়ার্দী হলের একটি কক্ষে একাই থাকছেন নিয়ামত। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

নিয়ামত উল্লাহ বর্তমানে আরবি বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী এবং সোহরাওয়ার্দী হল শিবির শাখার সভাপতি। একই সঙ্গে তিনি আসন্ন হল সংসদ নির্বাচনে শিবির সমর্থিত প্যানেল থেকে সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বর্তমানে তিনি হলের ২১৫ নম্বর কক্ষে এককভাবে বসবাস করছেন।

হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আবদুল মান্নান দাবি করেন, নিয়মানুযায়ী তাঁর অধীনে দুটি আসন বিশেষ বিবেচনায় বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাঁর ভাষায়, "প্রাধ্যক্ষ হিসেবে আমার দুটি আসন বরাদ্দের ক্ষমতা রয়েছে। নিয়ামত উল্লাহ নিয়মিত ডাইনিং ও খেলাধুলার কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন, সেই বিবেচনায় তাকে বিশেষভাবে আসন দেওয়া হয়েছে।"

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক নীতিমালা অনুসারে, একক আসন বরাদ্দের ক্ষেত্রে ফলাফলের ভিত্তিকেই প্রধান বিবেচনায় ধরা হয়। পাশাপাশি প্রতি হলে আর্থিক অসচ্ছলতা ও বাড়ির দূরত্ব বিবেচনায় মাত্র ১০ জন শিক্ষার্থীকে আসন দেওয়া যায়, তবে তাদের একক নয়, দ্বৈত আসনে থাকতে হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী বিশেষ বিবেচনায় হলে শিক্ষার্থী একক আসন নয়, দ্বৈত আসন পেতে পারে। তবে এটি কারও বৈধ আসন নয়।"

নিয়ামত উল্লাহর বিরুদ্ধে প্রশ্ন উঠেছে, কিভাবে তিনি কম ফলাফল নিয়েও একক কক্ষে অবস্থান করছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, গত মার্চে এক সহপাঠীর সঙ্গে দ্বৈত আসনের আবেদন করেছিলেন এবং গত মাসে একক আসন পেয়েছেন। তাঁর ভাষায়, অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার কারণেই তিনি আবেদন করেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির শাখার সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, "নিয়ামত উল্লাহ বিশেষ বিবেচনায় আসন পেয়েছেন। প্রত্যেক হলে ১০টির মতো আসন বিশেষ বরাদ্দ থাকে। নিয়ামত উল্লাহ আর্থিক সমস্যার কারণে আবেদন করেছিলেন। এ কারণে তিনি আসন পেয়েছেন।"

নিয়ামত উল্লাহর রাজনৈতিক পরিচয়ও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। অতীতে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন বলে জানা গেছে। এমনকি তাঁর ফেসবুক পোস্টে ২০২২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনে শুভেচ্ছা বার্তা ও আওয়ামী লীগ নেতা আ জ ম নাছির উদ্দীনকে প্রশংসা করার প্রমাণ মেলে।

এই বিষয়ে তিনি বলেন, "আমি ক্যাম্পাসে যখন আসি, তখন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছিলাম। হলে থাকতে গেলে তখন ছাত্রলীগ করা লাগত, তাই ছাত্রলীগ করেছি।"
তিনি আরও জানান, ২০২২ সালের জুনে ছাত্রলীগ ত্যাগ করে শিবিরে যোগ দেন। তাঁর ভাষায়, সেই সময় ছাত্রলীগ নেতাদের চাপে তিনি কিছু পোস্ট দিতে বাধ্য হন।

তবে নিয়ামত জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই হলে থাকছিলেন এবং নবম শ্রেণি থেকেই তিনি ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×