ডাকসু নির্বাচনের ফলাফলে গরমিল ১৮ প্রার্থীর প্রাপ্তভোটে


ডাকসু নির্বাচনের ফলাফলে গরমিল ১৮ প্রার্থীর প্রাপ্তভোটে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে কেন্দ্রীয় ফলাফলের সঙ্গে হলভিত্তিক ফলাফলে ১৮ প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটে অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। রোববার ভোটগুলো মিলিয়ে দেখা যায়, নয়জন প্রার্থীর ভোট কেন্দ্রীয় ফলে বেশি এবং বাকি নয়জনের কম দেখানো হয়েছে। এমন গরমিল নিয়ে ভুক্তভোগী প্রার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তবে চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক জসীম উদ্দিন একে ‘টাইপিং মিস্টেক’ বলে উল্লেখ করেছেন।

গত ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনের ফল পরদিন সকালে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ঘোষণা করা হয়। এতে সহ-সভাপতি পদে সাদিক কায়েম, সাধারণ সম্পাদক পদে এস এম ফরহাদ এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে মহিউদ্দীন খানসহ মোট ২৬টি পদে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হন।

তথ্য অনুযায়ী, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক নির্বাচিত আসিফ আব্দুল্লাহর প্রকৃত ভোট ৯১০১ হলেও কেন্দ্রীয় ফলে তা ৯০৬১ দেখানো হয়েছে। একই পদে মো. আসিফ জারদারীর ২০৫০ ভোটকে কেন্দ্রীয় ফলে ২০০০ উল্লেখ করা হয়েছে। ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক মাজহারুল ইসলামের ৯৮৪৪ ভোটকে কেন্দ্রীয় ফলে ৯৩৪৪ দেখানো হয়েছে।

ছাত্রদল প্যানেলের ক্রীড়া সম্পাদক প্রার্থী চিম চিম্যা চাকমার প্রকৃত ভোট ৩৮৮৮ হলেও ঘোষিত ফলে তা ৩৭৮৮ দেখানো হয়েছে। সদস্য প্রার্থী সর্বমিত্র চাকমা পেয়েছেন ৯৫৪৮ ভোট, কিন্তু ফলাফলে তা উল্লেখ করা হয়েছে ৮৯৮৮। একইভাবে আবিদ আব্দুল্লাহর প্রকৃত ভোট ২৪২৩, কিন্তু ফলাফলে ২৩৮৩।

সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক পদে মো. লানজু খান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ডাকসু নির্বাচনের ফলাফলে আমার ভোট ১৫৩১টি হলেও প্রতিটি হলের ভোট গণনা করে আমার ভোট এসেছে ১৫৭১টি। ধন্যবাদ ঢাবি প্রশাসনকে। আপনাদের চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারি।’

আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে মোহাম্মদ সাকিবের প্রকৃত ভোট ৩৯৬২ হলেও ফলাফলে ৩৯২২ উল্লেখ করা হয়। সাকিব লিখেছেন, ‘শিক্ষার্থীদের রায়কে সম্মান জানিয়ে যে কয়জন নির্বাচনকে গ্রহণ করেছে আমি তাদের মধ্যে অন্যতম। একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ব্যর্থতাকে আমি দালিলিক প্রমাণ হিসেবে রাখলাম।’ একই পদে আতাউর রহমান অপু ৫৯৮ ভোট পেলেও কেন্দ্রীয় ফলে ৫৯৫ দেখানো হয়েছে।

অন্যদিকে যাদের ভোট কেন্দ্রীয় ফলে বেশি দেখানো হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন সহসভাপতি প্রার্থী রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি ৬ ভোট পেলেও কেন্দ্রীয় ফলে ৮টি দেখানো হয়েছে। সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আশরেফা খাতুন পেয়েছেন ৮৯০, ফলাফলে দেখানো হয়েছে ৯০০।

সমাজসেবা সম্পাদক তাওহিদুল ইসলাম ২০৪৪ এর পরিবর্তে ২০৪৫, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ফাতিন ইশরাকের ২০১১ ভোটকে ২০২১, ফারহান লাবিবের ৪৮৬ ভোটকে ৫২৬ দেখানো হয়েছে।

ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে মাহাথির খান নিনাদ ও মো. রায়হানের ভোট যথাক্রমে ৬৯৪ ও ৩০৫ হলেও কেন্দ্রীয় ফলে ৭০৪ ও ৩১৫ উল্লেখ করা হয়। সদস্য প্রার্থী আবির হাসানের ভোট ৩২২৬ এর পরিবর্তে ৩৩২৬ এবং মনির হোসেনের ৫৪৬ ভোটকে ৫৮২ বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে অধ্যাপক জসীম উদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীদের যেটা যোগ করে পেয়েছে সেটাই সঠিক। এজন্যই তাদের লিস্ট দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, ‘ভোররাত পর্যন্ত গণনার পর সবাই ক্লান্ত ছিল। তখন সবারই ঘুম ঘুম ভাব ছিল, যার ফলে অনেকে পাঁচের জায়গায় চার লিখেছে। এগুলো টাইপোলজিক্যাল মিসটেক। তবে এটা সংশোধন করে দেওয়া হবে। হলের ফলাফলে কোনো ভুল নেই।’

নির্বাচনের চারদিন পর প্রকাশিত হলেও হলভিত্তিক ফলাফলে মোট ভোট ও বাতিল ভোটের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। কেবল ছয়টি হলের ফলাফল শিটে অনুপস্থিত ও বাতিল ভোটের হিসাব দেওয়া হয়েছে, যেগুলো হলো বিজয় একাত্তর হল, এফ রহমান হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, জগন্নাথ হল এবং সলিমুল্লাহ মুসলিম হল।

এই হলগুলোতে কেন্দ্রীয় সংসদের ভিপি পদে ৬৩টি, জিএস পদে ১৬৭টি, এজিএস পদে ৩৪৪টি ভোট কাস্ট হয়নি। বাতিল হয়েছে যথাক্রমে ৫০, ৫৮ ও ২১টি ভোট। অন্যদিকে হল সংসদে ভিপি পদে ৯টি, জিএস পদে ৬টি, এজিএস পদে ১৬টি ভোট বাতিল হয়।

তবে বাকি ১২টি হলে কত ভোট পড়েনি এবং কতটি বাতিল হয়েছে সে তথ্য এখনো দেওয়া হয়নি। এ প্রসঙ্গে চিফ রিটার্নিং অফিসার বলেন, ‘আমরা আলাদা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এটি দিয়ে দেব। অফিস বন্ধ থাকায় কাজটি করতে পারিনি।’

১৮টি হলের ফলাফলে মোট ভোট শতাংশ উল্লেখ না থাকলেও সহসভাপতি পদে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে। ভিপি পদে ২৯ হাজার ২৫৭ ভোট কাস্ট হয়, যা মোট ভোটারের ৭৩.৫৬ শতাংশ। এর মধ্যে ১৩টি ছাত্র হলে ১৭ হাজার ১১০ (৫৮.৪৮%) এবং পাঁচটি ছাত্রী হলে ১২ হাজার ১৪৭ (৪১.৫২%) ভোট পড়ে।

ভিপি পদে আবু সাদিক কায়েম ৪৮ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হন। ছাত্র হলে তার ভোটের হার ছিল ৫১.৫৪ শতাংশ এবং ছাত্রী হলে ৪৩.০১ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ছাত্রদলের আবিদুল ইসলাম পেয়েছেন ১৯.৫১ শতাংশ, যার মধ্যে ছাত্র হলে ২২.১৪ এবং ছাত্রী হলে ১৫.৮০ শতাংশ।

স্বতন্ত্র প্রার্থী উমামা ফাতেমা মোট ১১.৫৮ শতাংশ ভোট পান, ছাত্র হলে ৮.০৪ শতাংশ এবং ছাত্রী হলে ১১.৫৮ শতাংশ। স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম হোসেন ১৩.২৭ শতাংশ ভোট পেয়েছেন, যার মধ্যে ছাত্রী হলে ১৩.২৭ ও ছাত্র হলে ১০.১২ শতাংশ।

বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের আবদুল কাদের পেয়েছেন ৩.৭৭ শতাংশ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জামালুদ্দীন খালিদ পেয়েছেন ১.৭২ শতাংশ ভোট।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×