মনে হয় আমলারা বাস্তবতা ধারণ করতে পারছেন না: হাসনাত আব্দুল্লাহ


মনে হয় আমলারা বাস্তবতা ধারণ করতে পারছেন না: হাসনাত আব্দুল্লাহ

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, “বর্তমান আমলার মধ্যে অনেকেই বাস্তবতা ও সময়কে পড়তে পারছেন না। যদি মান্ধাতার আমলের সিস্টেম চালু রাখার প্রবণতা থাকে, তবে তারা যুগের চাহিদা ধরতে পারবে না। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের ক্রোধ অবধারিতভাবে বিস্ফোরিত হবে।”

রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে বিসিএস পরীক্ষার অগ্রগতি বিষয়ক পিএসসির সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব অভিযোগ করেন।

হাসনাত অভিযোগ করেন, “পিএসসি চায় ফাইন্যান্সিয়াল অটোনমি এবং ফাংশনাল অটোনমি, কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সব জায়গায় গুণ্ডামি বিরাজমান। তারা ফাইল আটকে রাখে এবং দিনের শেষে দেখা যায়, কাজের গতি শূন্য।”

তিনি আরও বলেন, “জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংস্কারের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু সেখানে অনীহা লক্ষ্য করা গেছে। ফাইল টেবিল থেকে টেবিলে ঘুরছে, ছয় মাসেও অগ্রগতি নেই।”

হাসনাত অভিযোগ করেন, মন্ত্রণালয় এখন ভাগ-বাটোয়ারা, পোস্টিং এবং প্রমোশন নিয়েই ব্যস্ত। ৫ আগস্টের পর সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছেন আমলারা, তবে সাধারণ চাকরিপ্রার্থীদের দুর্ভোগ অকম হয়নি। তিনি বলেন, “পিএসসি এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। চাকরিপ্রার্থীরা অগ্রাধিকার তালিকায় নেই। অনেকে নিজেদের পদোন্নতি নিশ্চিত করেছেন, কিন্তু সাধারণ প্রার্থীদের জন্য কোনো পরিকল্পনা নেই।”

তিনি উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন, “গত ১৯ জুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৪৪তম বিসিএস-এর জন্য ৪৩০টি পদের রিকুইজিশন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠায়। এখনো এর কোনো সমাধান হয়নি। এই সময়ে ৪৪তম বিসিএসের ফলাফল প্রকাশ হয়েছে, আবার পুনঃফলাফল হতে পারে। সচিবালয় থেকে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে পৌঁছাতে পাঁচ মাস লেগেছে।”

হাসনাত বলেন, পিএসসি আন্তরিকভাবে সংস্কারের চেষ্টা করছে। তবে চাকরি বিধি সংশোধনের এখতিয়ার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের হাতে। তাদের উদ্যোগ ছাড়া বিসিএস কাঠামো বা নন-ক্যাডার বিধি পরিবর্তন সম্ভব নয়।

এদিন সকালে এনসিপির প্রতিনিধি দল পিএসসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করে। প্রতিনিধি দলে ছিলেন মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন ও যুগ্ম সদস্য সচিব মোহাম্মদ মিরাজ মিয়া।

বৈঠকে বিসিএস প্রক্রিয়া দ্রুত ও স্বচ্ছ করতে ১৫ দফা প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—

১) ২৩ নন-ক্যাডার বিধি সংশোধন: প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে রয়েছে। পরীক্ষার্থীদের স্বার্থে দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য পিএসসি থেকে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর যেন চিঠি ইস্যু করা হয়। ৪৩তম বিসিএস থেকেই যেন সমন্বয় করা হয়।

২) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক পিএসসিতে ৪৩তম বিসিএস নন-ক্যাডার প্রার্থীদের জন্য অধিযাচিত পদসমূহে দ্রুততম সময়ে সুপারিশ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।

৩) ৪৪তম বিসিএসে অধিযাচিত ৮৭০ পোস্ট বৃদ্ধিসহ চলমান সপ্তাহেই ৪৪-এর পুনর্ফলাফল দেওয়া। সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে এই বিসিএস চলমান থাকায় চলতি বছরেই যেন গেজেট প্রকাশিত হয়।

৪) ২০২৩-এর নন-ক্যাডার বিধির সংশোধন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে চলমান (৪৩তম, ৪৪তম, ৪৫তম, ৪৬তম ও ৪৭তম) সব বিসিএস থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক নন-ক্যাডার পদে সুপারিশের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।

৫) ৪৩তম বিসিএস নন-ক্যাডার যারা পূর্বে ১২ গ্রেডের হেড টিচার হিসেবে সুপারিশ পেয়েছে, তাদের যেন মেধার ভিত্তিতে নতুন সার্কুলারে যুক্ত করা হয়।

৬) ৪৫তম বিসিএস ভাইভার হাজিরাপত্রে ভাইভা মার্কস ১০০ নম্বর লেখা।

৭) স্বচ্ছতা রক্ষার্থে প্রিলি, লিখিত ও ভাইভার মার্কস প্রকাশ করা।

৮) চূড়ান্ত নম্বরপত্র ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন ও রোল নম্বর দিয়ে দেখার সুযোগ করে দেওয়া।

৯) পুলিশ ভেরিফিকেশন জটিলতা হ্রাস। ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া এক মাসের মধ্যে সম্পন্নকরণ।

১০) ক্যালেন্ডার ইয়ারে প্রতিটি বিসিএস শেষ করা।

১১) শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিয়ে স্পেশাল বিসিএসগুলোতে প্যানেল সিস্টেম রাখা।

১২) ভাইভা বোর্ডভিত্তিক মার্কসের তারতম্য হ্রাসে কয়েকটা নির্দিষ্ট ক্যাটাগরি করা (ভাষা দক্ষতা, পঠিত বিষয়, ক্যাডার চয়েস, সমসাময়িক ইস্যু, রাষ্ট্রীয় পলিসি, প্রার্থীর বাহ্যিক ও মানসিক যোগ্যতা ইত্যাদি)।

১৩) প্রিলি থেকে লিখিত পরীক্ষার মধ্যবর্তী যৌক্তিক সময়সীমা। অন্তত দুই মাস বা ৫০ দিন পূর্বে লিখিত রুটিন প্রকাশ।

১৪) চূড়ান্ত রেজাল্ট দেওয়ার আগে ক্রস চেক করা, যাতে সমক্যাডার বা নিচের ক্যাডার কেউ না পায়। যেটা পূর্বের কমিশন করত।

১৫) পিএসসির অধীনে হওয়া পরীক্ষাগুলো গ্রেডভিত্তিক (ক্লাস্টার/সমন্বিতভাবে) নেওয়া।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×