কিছু রাজনৈতিক দল জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে সনদে সই করছে: নাহিদ


কিছু রাজনৈতিক দল জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে সনদে সই করছে: নাহিদ

রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে রাজধানীতে আত্মপ্রকাশ করল নতুন একটি শ্রমিক সংগঠন ‘জাতীয় শ্রমিক শক্তি’। শুক্রবার সকালে ঢাকার ইস্কাটন নেভি কলোনিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সংগঠনটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। এটি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র অঙ্গসংগঠন হিসেবে গঠিত হয়েছে।

নতুন এই সংগঠনের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মাজহারুল ইসলাম ফকির। রিয়াজ মোরশেদ হয়েছেন সদস্য সচিব এবং আরমান হোসেন দায়িত্ব নিয়েছেন মুখ্য সংগঠকের।

উদ্বোধনী আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সমসাময়িক রাজনীতিতে প্রতারণার অভিযোগ তুলে বলেন, "যে দিনে কিছু রাজনৈতিক দল জাতীয় ঐকমত্যের নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে একটি কাগজে সই করছে, সেই দিনে জাতীয় শ্রমিক শক্তি রাজপথে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে। আমরা জানি রাজপথের শক্তি জয়ী হয়। ইনশাআল্লাহ জাতীয় শ্রমিক শক্তিও জয়ী হবে। জাতীয় নাগরিক পার্টি শ্রমিকদের পক্ষে রাজনীতি করবে।"

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলের ঐক্যকে জাতীয় ঐক্য বলা যায় না। নাহিদের ভাষায়, "জাতীয় ঐক্য তখন হয়, যখন সমাজের সব অংশের মানুষ দেশপ্রেমের ভিত্তিতে এক হয়ে লড়াই করে। যেটা আমরা দেখেছিলাম জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে। সেসময় কোনো রাজনৈতিক দলের ব্যানার দেখিনি। শুধু দেখেছিলাম ছাত্র-শ্রমিক এবং নানান পেশাজীবী। আমরা সেই জাতীয় ঐক্যের দিকে এগোচ্ছি, যেখানে ছাত্র শ্রমিক কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংগ্রাম করবে লড়াই করবে।"

নাহিদ ইসলাম আরও অভিযোগ করেন, গত ১৬ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন শাসন ব্যবস্থায় সবচেয়ে বেশি নিপীড়নের শিকার হয়েছেন শ্রমিকরা। ২০২৪ সালের শুরুতেও ন্যায্য মজুরির দাবিতে আন্দোলনে নামতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে শ্রমিক নিহত হয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর সমালোচনা করে নাহিদ বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে অনেকগুলো কমিশন গঠিত হয়েছে। কিন্তু শ্রম কমিশন নিয়ে কোনো আলোচনা দেখা যায়নি। স্বাস্থ্য কমিশন নিয়েও কোনো আলাপ নেই। মানুষের জীবনের সঙ্গে যে গণসেবামূলক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান জড়িত তার সংস্কার নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। শুধু নির্বাচন কেন্দ্রিক ছয়টি সংস্কার কমিশন নিয়ে ঐকমত্য কমিশন গঠন হয়েছে। সেখানেও গণতন্ত্রের জন্য ভালোকিছু দেখতে পারছি না।”

তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পাশাপাশি অর্থনৈতিক কাঠামোতেও বড় পরিবর্তন প্রয়োজন, যেখানে ছাত্র, শ্রমিক ও পেশাজীবীরা একসঙ্গে লড়বে।

শ্রমিকদের শত্রু হিসেবে যেসব মাফিয়া দীর্ঘদিন ধরে শ্রমশক্তিকে শোষণ করে এসেছে, তাদের এখনো বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন নাহিদ ইসলাম। তার মতে, এই শোষকচক্রকে এখনো রাষ্ট্রীয়ভাবে সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, “জাতীয় শ্রমিকশক্তি শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করবে। বাংলাদেশে সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সব প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের প্রতি অসম্মানের আচরণ করা হয়। রাষ্ট্রীয়ভাবেও এই বৈষম্য চালানো হচ্ছে।”

শ্রম সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ তার বক্তব্যে বলেন, “বিগত কয়েক বছরে হাজারো শ্রমিকের মৃত্যু ঘটেছে। তাদের হত্যার জন্য দায়ীদের তেমন বিচার হয়নি।”

তিনি আরও বলেন, একটি বৈষম্যমুক্ত সমাজ গড়তে হলে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতেই হবে। এজন্য শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করাও জাতীয় শ্রমিক শক্তির গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×