বিদেশ নয়, আল্লাহ ও দেশের চিকিৎসকদের উপরই আমার পূর্ণ আস্থা ছিল: ডা. শফিকুর


বিদেশ নয়, আল্লাহ ও দেশের চিকিৎসকদের উপরই আমার পূর্ণ আস্থা ছিল: ডা. শফিকুর

নিজের চিকিৎসায় বিদেশ নয়, বরং আল্লাহ ও দেশের চিকিৎসকদের ওপরই পূর্ণ আস্থা রেখেছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, “আমরা কাজ করি নাগরিকদের জন্য। সেই নাগরিক সমাজকে বাংলাদেশে ফেলে আল্লাহর কসম - আমার পক্ষে বিদেশের মাটিতে চিকিৎসার জন্য যাওয়া সম্ভব হয়নি। আমার পূর্ণ আস্থা আল্লাহর উপরে আছে, দেশের চিকিৎসক সমাজের উপর আছে।”

শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকা-১০ আসনের কাফরুল দক্ষিণ থানার উদ্যোগে আয়োজিত একটি ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি জানান, দেশের চিকিৎসকদের প্রতি আস্থা না থাকায় অনেক সামর্থ্যবান ব্যক্তি চিকিৎসার জন্য হুড়মুড় করে বিদেশে চলে যান। “আমি বেদনার সঙ্গে লক্ষ করছি, আমাদের দেশের চিকিৎসক সমাজের উপর সবাই আস্থা রাখেন না। এজন্য যাদের সামর্থ্য আছে তারা হুড়মুড় করে বিদেশের দিকে দৌড়ান। তাদের এই দৌড় দেওয়ার মাধ্যমে তারা প্রমাণ করেন যে তাদের আস্থা নেই। যদি সাধারণ মানুষ দেশের চিকিৎসকদের উপর আস্থা না রাখে, তাহলে আমাদের সম্মানিত চিকিৎসকরা নিজেদের উপর আস্থাশীল হবেন কীভাবে?”

ডা. শফিকুর বলেন, “দেশে কোটি কোটি মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত। ধরা যাক, ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে ৫০ লক্ষ মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত। তাদের কি বিদেশে যাওয়ার সামর্থ্য আছে? গ্রাম থেকে ঢাকায় আসার সামর্থ্য অনেকের নেই। তারা দেশের চিকিৎসকদের হাতেই নির্ভরশীল। তাই দেশের চিকিৎসকদের প্রতি আস্থা থাকা জরুরি।”

নিজের অসুস্থতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সমাবেশের দিন আমি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ি। টিভি স্ক্রিন ও মোবাইলের মাধ্যমে উপস্থিত মানুষ তা দেখছিলেন। তখনই ইউনাইটেড হসপিটালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মমিনুজ্জামান আমার চিকিৎসার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। আমি (আলহামদুলিল্লাহ) তাদের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিই।”

তিনি বলেন, “চিকিৎসকরা প্রথমে আমাকে বিদেশে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তারা সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, আমেরিকার নাম বলেছিলেন। আমি তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলেছিলাম, আল্লাহ যদি বিদেশে সুস্থ করতে পারেন, তবে তিনি বাংলাদেশেও সুস্থ করতে পারেন। আমি বিশ্বাস করি, আল্লাহর দেওয়া জ্ঞান ও দক্ষতার মাধ্যমে চিকিৎসকের হাতেই সুস্থতা আসে।”

অপারেশন থিয়েটারে চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আমি আপনাদের বলেছি, ভুলে যান আমার পরিচয়। আমাকে একজন সাধারণ রোগী হিসেবে নিন। যেভাবে আরও দশজন রোগীকে হ্যান্ডেল করেন, ঠিক সেইভাবে আমাকে হ্যান্ডেল করবেন। আমার যদি অপারেশন টেবিলে শেষ নিঃশ্বাস আল্লাহ তা’আলা কবুল করেন, আপনাদের কোনো দায় থাকবে না। সুস্থতা-অসুস্থতা, জীবন-মৃত্যু সবই আল্লাহর হাতে।”

দেশে চিকিৎসার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, “হাজারো মানুষ উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে গিয়ে দেশে ফিরেন কফিনে। আবার হাজারো মানুষ দেশের হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে হাসিখুশি জীবনযাপন করছে। তাই দেশের চিকিৎসকদের প্রতি আস্থা রাখা এবং তাদের উৎসাহ দেওয়া আমাদের দায়িত্ব।”

নিজের সুস্থতার জন্য আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমার দীর্ঘ জীবনে আল্লাহ আমাকে হায়াত এবং বিভিন্ন ধরনের নিয়ামত দান করেছেন। আমি গুনাহগার। আল্লাহর দেওয়া নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করি। যদি আল্লাহ আমাকে সুস্থ রাখেন, আমি তা দেশের নাগরিকদের কল্যাণে ব্যবহার করব।”

চিকিৎসকদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, “আমি শুনেছি কোটি কোটি মানুষ দেশে-বিদেশে আমার জন্য দোয়া করছে। আমি এটাও শুনেছি, আমার চাইতে বেশি আপনার জন্য দোয়া করছে; যাতে আল্লাহর দেওয়া জ্ঞান ও দক্ষতার অনুযায়ী সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিতে পারেন। তাই ভুলে যান আমার পরিচয়, আমাকে একজন সাধারণ রোগী হিসেবে নিন। যেভাবে অন্যদের চিকিৎসা করেন, ঠিক তেমনি আমার ক্ষেত্রেও করবেন।”

উল্লেখ্য, দীর্ঘ প্রায় দেড় মাস অসুস্থ থাকার পর এই প্রথম জনসম্মুখে এসে বক্তব্য রাখেন ডা. শফিকুর রহমান। শুরুতেই তিনি মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, যে তিনি আবারও সুস্থ হয়ে জনসম্মুখে কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×