শিবিরের নির্দেশনায় কাজ করতাম, এটা মিথ্যাচার: নাহিদ ইসলাম


শিবিরের নির্দেশনায় কাজ করতাম, এটা মিথ্যাচার: নাহিদ ইসলাম

ছাত্র আন্দোলনের সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে শিবিরের নির্দেশনায় কাজ করার বিষয়টিকে 'মিথ্যাচার' হিসেবে বর্ণনা করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। এক ফেসবুক পোস্টে তিনি সরাসরি অস্বীকার করেছেন, যে তাদের আন্দোলনের সমন্বয় কোনোভাবে ছাত্রশিবিরের পরিচালনায় হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়ে তিনি বলেন, শিবির নেতা সাদিক কায়েম সম্প্রতি একটি টকশোতে দাবি করেছেন, 'ছাত্রশক্তির গঠনপ্রক্রিয়ায় শিবির যুক্ত ছিল, শিবিরের ইনস্ট্রাকশনে আমরা কাজ করতাম।' এ বক্তব্যকে নাহিদ ইসলাম এক কথায় ‘মিথ্যাচার’ বলে আখ্যায়িত করেন।

নাহিদ ইসলাম তার পোস্টে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটি বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান। তিনি লেখেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল সম্প্রতি একটা সাক্ষাৎকারে বলেছেন, জাতীয় সরকারের কোনো প্রস্তাবনা ছাত্রদের পক্ষ থেকে তাদের দেওয়া হয়নি। তারা অন্য মাধ্যমে এ প্রস্তাবনা পেয়েছিলেন। এ বক্তব্যটি সত্য নয়।

তিনি আরও জানান, ৫ অগাস্ট রাতের প্রেস ব্রিফিংয়ে আমরা বলেছিলাম, আমরা অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার করতে চাই। সেই প্রেস ব্রিফিংয়ের পরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আমাদের ভার্চুয়াল মিটিং হয়। সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে জাতীয় সরকার ও নতুন সংবিধানের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তারেক রহমান এ প্রস্তাবে সম্মত হননি এবং নাগরিক সমাজের সদস্যদের দিয়ে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সাজেশন দেন। আমরা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কথা বলি প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে।

পোস্টে নাহিদ ইসলাম আরও উল্লেখ করেন, ৭ অগাস্ট ভোরবেলা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের বাসায় আমরা তার সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার ও উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে আলোচনা করি। উপদেষ্টা পরিষদ শপথ নেওয়ার আগে তারেক রহমানের সঙ্গে আরেকটি মিটিংয়ে প্রস্তাবিত উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবৃন্দ নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা হয়।

সাদিক কায়েমের বক্তব্য খণ্ডন করে তিনি জানান, ‘গুরুবার আড্ডা’ পাঠচক্রের সঙ্গে জড়িত একটা অংশ এবং ঢাবি ছাত্রঅধিকার থেকে পদত্যাগ করা একটা অংশ মিলে ছাত্রশক্তি গঠিত হয়। সঙ্গে জাবির একটা স্টাডি সার্কেলও যুক্ত হয়।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ‘গুরুবার আড্ডা’ পাঠচক্রের মাধ্যমে একটি নতুন ছাত্র সংগঠন গঠনের কাজ চলছিল। আমরা ক্যাম্পাসে আট বছর ধরে রাজনীতি করছি। ফলে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ছিল। এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, শিবিরের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও, সেটি কোনো রাজনৈতিক নির্দেশনা গ্রহণের বিষয় ছিল না।

নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, সাদিক কায়েম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সমন্বয়ক ছিলেন না। কিন্তু ৫ অগাস্ট থেকে এ পরিচয় তিনি ব্যবহার করেছেন। তিনি জানান, আন্দোলনে শিবিরের কিছু ভূমিকা থাকলেও তা কোনোভাবেই নেতৃত্বের পর্যায়ে ছিল না। শিবিরের ইনস্ট্রাকশন বা ডিরেকশন হয়নি, তিনি স্পষ্ট করে বলেন।

নাহিদ ইসলাম তার পোস্টে উল্লেখ করেন, ২ অগাস্ট, ২০২৪ রাতে জুলকারনাইন সায়েররা একটা আর্মি ক্যু করে সামরিক বাহিনীর এক অংশের হাতে ক্ষমতা দিতে চেয়েছিল। তিনি দাবি করেন, এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ছাত্র সংগঠনের কয়েকজনকে কথিত সেফ হাউজে রেখে সরকার পতনের একদফা দাবি তুলে ধরার জন্য চাপ প্রয়োগ ও হুমকি দেওয়া হয়েছিল।

তিনি লেখেন, আমাদের বক্তব্য ছিল, একদফার ঘোষণা মাঠ থেকে জনগণের মধ্য থেকে দিতে হবে। আর যারা এভাবে চাপ প্রয়োগ করছে তাদের উদ্দেশ্য সন্দেহজনক। তাঁর দাবি, এই ধরনের সেনাবাহিনী-সমর্থিত ক্ষমতা গ্রহণের চেষ্টা আরেকটি এক-এগারোর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারত এবং তাতে আওয়ামী লীগের পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার পথ খুলে যেত।

নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন, সায়ের গংদের এ চেষ্টা অব্যাহত আছে। কল রেকর্ড ফাঁস, সার্ভাইলেন্স, চরিত্রহনন, অপপ্রচার, প্রোপাগান্ডা হেন কোনো কাজ নেই হচ্ছে না। তিনি দাবি করেন, তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে, তবে শেষ পর্যন্ত সত্যের জয় হবেই। মিথ্যার উপর দিয়ে বেশিদিন টিকে যায় না। এরাও টিকবে না,—এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×