জুলাই সনদের খসড়া অসম্পূর্ণ এবং কিছু অংশ বিপজ্জনক: জামায়াতের নায়েবে আমির
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৫:৪০ পিএম, ২৯ জুলাই ২০২৫

জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবিত ‘জুলাই সনদ’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির মতে, খসড়াটি অসম্পূর্ণ, আর এতে থাকা কিছু সুপারিশ দেশকে রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে।
মঙ্গলবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত ২১ দিনের সংলাপের দ্বিতীয় ধাপে বিরতির সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, সনদ অসম্পূর্ণ এবং কিছু অংশ বিপজ্জনক। তবে কমিশন বলছে, খসড়া একটি নমুনা মাত্র। তবে যদি সেটাই গ্রহণ করা হয়, তাহলে প্রস্তাবিত সনদ গ্রহণ করা যাবে না।
তিনি জানান, জামায়াত নিজস্ব প্রস্তাবনা তৈরি করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে দেবে। সংলাপে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হচ্ছে, সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য আইনি ভিত্তি থাকা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সনদ বাস্তবায়নের জন্য দুইটি পথের কথা বলেন তাহের। তার ভাষায়, তা হতে পারে –
১. অধ্যাদেশ জারি করে একটি আইনি কাঠামো তৈরি, যা পরে নির্বাচিত সংসদে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।
২. বিকল্পভাবে, গণভোটের মাধ্যমে জনগণের চূড়ান্ত অনুমোদন নেওয়া যেতে পারে।
যেকোনো একটি পদ্ধতিতে সনদের বৈধতা দিতে চাই। অন্যথায় দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ‘অনিশ্চয়তার দিকে’ চলে যেতে পারে, বলেন তাহের।
সংলাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামো নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জামায়াতের এই নেতা। তার মতে, প্রায় সব দলের মধ্যে এ বিষয়ে ঐকমত্য রয়েছে, কেবল বিএনপি কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে।
তাহের জানান, প্রস্তাবিত কাঠামো অনুযায়ী পাঁচ সদস্যের একটি বাছাই কমিটি গঠিত হবে—প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী দলের), এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের একজন প্রতিনিধি এই কমিটিতে থাকবেন। তারা ১২ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা থেকে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করবেন।
যদি ঐকমত্যে পৌঁছানো না যায়, তবে প্রথমে সর্বসম্মতির চেষ্টা করা হবে। এরপর ভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং প্রয়োজন হলে ‘র্যাংক চয়েস ভোটিং’ পদ্ধতি ব্যবহৃত হবে।
এ ক্ষেত্রে ভোটার থাকবেন সাতজন—উল্লিখিত পাঁচ সদস্যের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট থেকে একজন করে বিচারপতি।
তাহের বলেন, বিচারপতি দুজন যুক্ত করা হয়েছে যেন এককভাবে তৃতীয় দল বা অন্য কেউ ডিসাইডিং ফ্যাক্টর না হয়ে যায়। আমরা আশা করি বিচারপতিরা নিরপেক্ষ থাকবেন এবং হর্স ট্রেডিংয়ের আশঙ্কা কমবে।
বিএনপির প্রস্তাবের প্রসঙ্গে তাহের জানান, দলটি চায় যে যদি ঐকমত্য না হয়, তবে বিষয়টি সংসদে পাঠানো হোক। তবে জামায়াতসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল মনে করে, সংসদে পাঠানো হলে বিষয়টির আর কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে না।
সংসদে মাত্র পাঁচ-ছয়টি দল রয়েছে, অথচ এই সংলাপে অংশ নিচ্ছে ৩০টিরও বেশি রাজনৈতিক দল। তাই এখানেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি, বলেন তাহের।