
বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও গতিশীল করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং-সিক। বুধবার ১৭ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।
সাক্ষাৎকালে রাষ্ট্রদূত পার্ক সুদানের আবিয়েই অঞ্চলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা ঘাঁটিতে সাম্প্রতিক ড্রোন হামলায় ছয়জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর নিহত হওয়ার ঘটনায় শোক প্রকাশ করেন এবং ‘গভীর দুঃখ’ জানান।
তিনি বাংলাদেশের চলমান গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য শুভকামনা জানান এবং আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আলোচনায় দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিতে বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। এর মধ্যে বাংলাদেশে দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগ বৃদ্ধি, প্রস্তাবিত সমন্বিত অর্থনৈতিক চুক্তির অগ্রগতি, মানবসম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগ এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় সম্প্রসারণের বিষয়টি গুরুত্ব পায়।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সফলভাবে দায়িত্ব পালন শেষে রাষ্ট্রদূত পার্কের বিদায়ে অভিনন্দন জানান এবং বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্ক গভীর করতে তার ভূমিকার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
ড. ইউনূস বলেন, বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ আকর্ষণে বাংলাদেশ ধারাবাহিক সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। তিনি জানান, চট্টগ্রামে কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনে দীর্ঘদিনের একটি জটিলতা অন্তর্বর্তী সরকার সমাধান করেছে, যা দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী করে তুলবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
জবাবে রাষ্ট্রদূত পার্ক জানান, দক্ষিণ কোরিয়ার ইলেকট্রনিকস জায়ান্ট স্যামসাং বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে আগ্রহ দেখিয়েছে। এর অংশ হিসেবে দেশে মোবাইল ফোন উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনাও রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে প্রস্তাবিত সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি সিইপিএ নিয়ে নতুন দফা আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই চুক্তি কার্যকর হলে বাংলাদেশের পণ্য, বিশেষ করে তৈরি পোশাক, দক্ষিণ কোরিয়ার বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে।
রাষ্ট্রদূত পার্ক উল্লেখ করেন, বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ার পোশাক আমদানিতে বাংলাদেশের অংশ পাঁচ শতাংশেরও কম। এই বাজারে ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার প্রাধান্য রয়েছে। তিনি জানান, দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আওতায় এই দুই দেশের পণ্য কোরিয়ার বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করছে।
দুই দেশের জনগণের মধ্যে বিদ্যমান ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক সম্পর্কের কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা দক্ষিণ কোরিয়াকে বাংলাদেশে আরও প্রশিক্ষণকেন্দ্র, বিশেষ করে ভাষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের বিষয়টি বিবেচনার আহ্বান জানান। এতে দেশের তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারিত হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।