
মানবাধিকার নিয়ে কথা বলতে এখন মানুষ দ্বিধায় ভোগে- এমন মন্তব্য করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল। তিনি বলেন, কারও কাছে মানবাধিকারের কথা তুললে সেটি শ্রদ্ধা ও সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করা হবে কি না, এমন অনিশ্চয়তা থেকেই যায়। তার মতে, সংবিধানে যে সাম্য, মানবিক মূল্যবোধ ও ন্যায়ের কথা বলা হয়েছে, সেসব থেকে বিচ্যুত হলেই মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটে।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সেমিনার হলে আয়োজিত বিশেষ আলোচনায় প্রধান বক্তা হিসেবে অংশ নিয়ে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
সুলতানা কামাল বলেন, মানবাধিকারকে অনেকে বড় অপরাধের সঙ্গে যুক্ত করে দেখে। কিন্তু মানবাধিকার মানে মানুষের মানুষ হয়ে ওঠার প্রক্রিয়া। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন রবীন্দ্রনাথের সেই উক্তি- “পৃথিবীতে অন্য কোনো প্রাণী জন্ম নিয়ে শুনতে হয় না যে, এই প্রাণী হয়ে ওঠো- মানুষকেই শুনতে হয় মানুষ হও।” তার ভাষায়, মানুষের জন্মগত অধিকারগুলো সহজাত, অলঙ্ঘনীয় ও হস্তান্তরযোগ্য নয়; রাষ্ট্রের কাজ শুধু এই অধিকারগুলোর সুরক্ষা দেওয়া।
তিনি আরও বলেন, “১২১৫ সালে ম্যাগনা কার্টা যা বলেছিল, ২০২৫ সালেও আমরা সেটাই বলছি- কোনো মানুষকে সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া গ্রেপ্তার করা যাবে না। মানুষের সঙ্গে হিংসাত্মক আচরণ করা যাবে না।” স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ও শান্তি না থাকলে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা অসম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জবাবদিহিমূলক সংস্কৃতি গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে সুলতানা কামাল বলেন, মানবাধিকার কেবল আইনের বিষয় নয়; এটি একটি মৌলিক সংস্কৃতি, যা ব্যক্তির আচরণে প্রতিফলিত হওয়া উচিত। তিনি বলেন, “সমাজ, পরিবার- সব জায়গায় আমাদের জবাবদিহি আছে। সেখান থেকে সরে যাওয়ার কারণেই মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে।”
অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী। তিনি বলেন, দেশে মানুষের জীবন এখনও ভয়ের সংস্কৃতির মধ্যে আবদ্ধ। তার মতে, মানবাধিকার বাস্তবায়নের পথে এই ভয়ের সংস্কৃতিই সবচেয়ে বড় বাধা, এবং সেখান থেকে বেরিয়ে আসাই এখন জরুরি।