স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দেননি রাজসাক্ষী মামুন, শেখ হাসিনার আইনজীবীর দাবি


স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দেননি রাজসাক্ষী মামুন, শেখ হাসিনার আইনজীবীর দাবি

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাজসাক্ষী হিসেবে চিহ্নিত সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি স্বেচ্ছায় দেওয়া হয়নি, বরং তাকে প্ররোচিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে নিযুক্ত রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।

সোমবার, ৬ অক্টোবর, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরকে জেরা করতে গিয়ে এই অভিযোগ তোলেন তিনি। মামলাটি ২০২৩ সালের জুলাই ও আগস্টে সংঘটিত একটি আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধসংক্রান্ত। তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীর এদিন ছিলেন মামলার ৫৪তম এবং সর্বশেষ সাক্ষী।

জেরা চলাকালীন আমির হোসেন প্রশ্ন তোলেন, “আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে চাননি। বরং আমার মক্কেল শেখ হাসিনা ও কামালকে ফাঁসানোর জন্য আপনি এবং তদন্ত সংস্থার অন্যান্য সদস্যরা তাকে প্ররোচিত করেছেন।”

তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “নিজের ইচ্ছেতেই জবানবন্দি দিয়েছেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। আমি বা তদন্ত সংস্থার কেউ তাকে কোনোভাবে প্রভাবিত করিনি।”

জেরার সময় শেখ হাসিনার আইনজীবী আরও অভিযোগ করেন, ওই আন্দোলনে বহু মানুষ হতাহত হলেও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মাত্র কয়েকটি ভুক্তভোগী পরিবারের বক্তব্যই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এর জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা জানান, প্রায় ১৫০০ জন নিহত এবং ২৫ হাজার ছাত্র-জনতা আহত হয়েছিলেন। এত বিপুল সংখ্যক ভুক্তভোগীর সবার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি, তবে অনেকের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। তার ভাষায়, “শহীদ পরিবারের ১০ জন এবং আহত পরিবারের ২২ জনকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি।”

আইনজীবী আমির হোসেন ট্রাইব্যুনালে দাখিলকৃত জব্দ তালিকাকে ‘অসত্য’ আখ্যা দিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তবে তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীর তা নাকচ করে বলেন, জব্দ তালিকার তথ্যগুলো সঠিক।

এক পর্যায়ে, ‘আমার দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আমির হোসেন। তার দাবি, সম্পাদক মাহমুদুর রহমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কারাভোগ করায় শেখ হাসিনার প্রতি বিদ্বেষপ্রসূত হয়ে এসব তথ্য প্রচার করেছেন।

তিনি আরও দাবি করেন, মামলায় ২০ ও ২১ এপ্রিল তারিখে জব্দ করা ১৯টি ভিডিও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। তবে তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীর তা অস্বীকার করে জানান, “এসব ভিডিও এআই জেনারেটেড ছিল না।”

সকাল পৌনে ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল বেঞ্চে এই জেরা চলে। এক পর্যায়ে বিরতি দেওয়া হলেও, জেরা শেষ না হওয়ায় শুনানি মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করা হয়।

এদিন ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, তানভীর হাসান জোহা, ফারুক আহাম্মদ, আবদুস সাত্তার পালোয়ান এবং মঈনুল করিমসহ আরও অনেকে।

একই সঙ্গে, মামলার অন্যতম আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকেও আদালতে হাজির করা হয়। ৩৬ নম্বর সাক্ষী হিসেবে আগেই সাক্ষ্য দেওয়া মামুন ইতোমধ্যে নিজেকে দায়ী স্বীকার করে রাজসাক্ষীর মর্যাদা পেয়েছেন।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×