বদলে যাচ্ছে ডিসি-ইউএনও পদের নাম
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৭:৩১ পিএম, ০৫ অক্টোবর ২০২৫

বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামোয় আসছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশে গঠিত হতে যাচ্ছে ‘সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস’ বা এসইএস, যা প্রশাসনের উপসচিব থেকে শুরু করে সচিব পর্যন্ত পদগুলোকে এক ছাতার নিচে আনবে। নতুন এই কাঠামোর অধীনে জনপ্রশাসনে যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি এবং নিয়োগ নিশ্চিত করতে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার আয়োজন করা হবে।
এই সংস্কারের অংশ হিসেবে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) পদবির নামও পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ডিসির নতুন পদবি হবে ‘জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা কমিশনার’, আর ইউএনও হবেন ‘উপজেলা কমিশনার’। প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসসংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটিকে (নিকার) এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। গত জুলাইয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো এক চিঠিতে এসব সুপারিশ দ্রুত কার্যকর করার আহ্বান জানানো হয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে এখন সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো কাজ শুরু করেছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “সুপারিশ বাস্তবায়নের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।”
সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, এসইএস গঠনের উদ্দেশ্য হল প্রশাসনের মেধাসম্পন্ন ও দক্ষ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি উচ্চমানের সেবাদান কাঠামো তৈরি করা। সব ক্যাডার সার্ভিসের মধ্যে সমতা আনা এবং মেধার ভিত্তিতে পদোন্নতির সুযোগ নিশ্চিত করাও এই উদ্যোগের অন্যতম লক্ষ্য।
এসইএসে যোগদানের জন্য কমপক্ষে ১০ বছর চাকরির অভিজ্ঞতাসম্পন্ন যেকোনো সার্ভিসের সিনিয়র স্কেলধারী কর্মকর্তারা আবেদন করতে পারবেন। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগের প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করবে পাবলিক সার্ভিস কমিশন। উপসচিব, যুগ্ম সচিব এবং অতিরিক্ত সচিব পদের জন্য প্রতিবছর আলাদা আলাদা পরীক্ষা নেওয়া হবে। একজন কর্মকর্তা সর্বোচ্চ দুইবার পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন, তবে দুইবারই অকৃতকার্য হলে আর পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থাকবে না।
এসইএসে উত্তীর্ণদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ হবে সম্মিলিত মেধাক্রম অনুযায়ী। এসইএসে একবার যুক্ত হলে, সেই কর্মকর্তা আগের বিশেষায়িত সার্ভিসে আর ফিরে যেতে পারবেন না। পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে সব সার্ভিসের সদস্যদের নিয়ে একটি একক মেধাতালিকা তৈরি করা হবে।
বর্তমানে যারা উপসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে কর্মরত, তারা নতুন গঠিত এসইএসে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন্তর্ভুক্ত হবেন। একইভাবে সচিব, মুখ্যসচিব এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিবরাও এই কাঠামোর সদস্য হবেন। একজন মন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত মন্ত্রিসভা কমিটি অতিরিক্ত সচিবদের মধ্য থেকে সচিব এবং সচিবদের মধ্য থেকে মুখ্যসচিব পদে পদোন্নতির সুপারিশ সরকারকে পাঠাবে।
এসইএস গঠনের পর প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা সহকারী কমিশনার, সিনিয়র সহকারী কমিশনার, উপজেলা কমিশনার (বর্তমানে ইউএনও), জেলা কমিশনার (বর্তমানে ডিসি), অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ও বিভাগীয় কমিশনার পদে কাজ করবেন। জেলা কমিশনারের পদ এসইএস কাঠামোয় অন্তর্ভুক্ত হলেও সেখানে প্রশাসন ক্যাডার থেকে পদায়নের সুপারিশ রয়েছে। তবে এসব কর্মকর্তার পদমর্যাদা এসইএস কর্মকর্তাদের সমান হবে না।
এ ছাড়া ‘অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)’ পদের নাম বদলে ‘অতিরিক্ত জেলা কমিশনার (ভূমি ব্যবস্থাপনা)’ করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।
জনমুখী, জবাবদিহিমূলক ও শিক্ষার্থীবান্ধব প্রশাসন গড়ে তোলার লক্ষ্যে দুই শতাধিক সংস্কার প্রস্তাবের বাস্তবায়ন শুরু করেছে সরকার। সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস সেই পরিবর্তনের অন্যতম চালিকাশক্তি হতে চলেছে।